র‌্যাবে গুম-খুনে সহায়তা না করলে নির্যাতন করা হতো : অবসরপ্রাপ্ত মেজর রেজা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে র‌্যাবে যেসব কর্মকর্তা গুম-খুনে সহায়তা করতেন তাদেরকে পুরস্কৃত করা হতো বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোঃ রেজাউল করিম রেজা।

তিনি বলেন, ‘গুম-খুনে সহায়তা না করলেই নির্যাতন ও শাস্তির খড়গ নেমে আসত, ফাঁসানো হতো মিথ্যা মামলায়। আমি নিজেও একজন ভুক্তভোগী। আমার পেশাগত জীবন তারা ধ্বংস করে দিয়েছিল।’

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে র‌্যাবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর।

১৭ ফেব্রুয়ারি ‘পুলিশ নামক এক জানোয়ার—আলেপ! রোজা ভাঙিয়ে আসামীর স্ত্রীকে ধর্ষন! অবশেষে মৃত্যু!’ শিরোনামে এক ফেসবুক পোস্টে রেজাউল করিম রেজা লিখেন, ‘স্বামীকে গ্রেফতার করা হয় তথাকথিত জঙ্গি নামক নাটকে। স্বামীকে আটক রেখে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষন করা হয় আসামীর স্ত্রীকে। এর আগেও প্রায় তিনবার ধর্ষন করা হয়েছে স্বামীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে। শেষবার ধর্ষনের পর স্ত্রীর মানসিক অবস্থার অবনতি হয় এবং কিছুদিন পরে মৃত্যুবরন করেন।

ধর্ষক র‍্যাবের একজন ঊর্ধ্বন কর্মকর্তা, নাম আলেপ। স্বামী সবকিছু হারিয়ে যখন আলেপকে বারংবার ফোন দিতে থাকে আলেপ রিপ্লাইয়ে জানান, বন্দি মেয়ে বা বন্দি পুরুষদের স্ত্রীদের সাথে এমন আচরণ এখানে অলিখিতভাবে স্বীকৃত।

মানুষ কতটা নিচুতে নামলে নিজের মা/ স্ত্রী/মেয়ে থাকা সত্ত্বেও একজন বন্দির স্ত্রীকে এমনভাবে ট্রিট করে! এই র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপের বিচার সবার আগে হওয়া উচিত।’

গতকাল আরেক পোস্টে সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা লিখেন, ‘আমরা RAB-এ কি করেছি আর এই জানোয়ার আলেপ কি করেছে—-আমি চেষ্টা করেছি জান-মাল রক্ষা করতে আর এই জানোয়ার চেয়েছেন ভক্ষন করতে। তখন যদি খুনি ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ও মানুষের জীবনে বাঁচানোর জন‍্য কাজ না করে উল্টা গুম খুনে সহায়তা করতাম তাহলে কোনদিনই RAB থেকে অকালীন পোস্টিং হতো না।

RAB-এ কর্মরত অবস্থায় আমার সর্বপ্রথম অর্জন ছিল খিলক্ষেতের চাঞ্চল্যকর ইভা ধর্ষন ও হত্যাকাণ্ডের আসামীকে সনাক্তকরণ, খুঁজে বের করা এবং গ্রেফতার করা।

এছাড়াও আরো অনেকগুলো Rape case নিয়ে আমি কাজ করেছিলাম। বিশেষ করে ধর্ষকের বিরুদ্ধে Zero Tolerance!’

একটি ছবি শেয়ার করে তিনি আরও লিখেন, ‘এখানে যে ছবিটা দেয়া হয়েছে— এই মেয়ের মা বাড্ডা এলাকার একজন ধনী বাড়িওয়ালা ছিলেন, তার স্বামী খুব সম্ভবত বিদেশে থাকতেন— কোন তদ্বির করতে হয়নি, শুধু মাত্র অভিযোগটি জানিয়ে ছিলেন, তাতেই ঝাপিয়ে পড়ে ময়মনসিংহ থেকে মেয়েটিকে অক্ষত উদ্ধার করেছিলাম। ঐ ভদ্রলেডির দিকে তাকিয়ে নিজের মেঝো বোনের কথা মনে পড়ে ছিল কারণ তার মেয়েও একদিন এমন বিপদে পড়েছিল। তাই দরদ দিয়ে কাজ করেছি। কখনও কাউকে বড় বোন, কখনও কাউকে ছোট বোন, কখনও কাউকে মা’য়ের মতো মনে হতো —বাজে নজর কি কখনই মাথায় আসেনি।’

র‌্যাবের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, গুম-খুন ও ধর্ষনের পুরস্কার স্বরুপ র‌্যাব কর্মকর্তা আলেপ পেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল) ও বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) পদক।

১৫ ফেব্রুয়ারি অবসরপ্রাপ্ত মেজর রেজা ‘আয়নাঘরের ইতিকথা-১’ শিরোনামে আরেকটি পোস্টে তাকে নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘RAB-7 এর অধিনায়ক থাকাকালীন এবং পরবর্তীতে Director, intelligence wing হিসেবে RAB HQ এ কর্মরত অবস্থায় মাসরুর আনোয়ার চৌধুরীর (Masrur Anwar Chowdhury) মতো অনেককেই গুম খুনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন লেঃ কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল। অথচ এই অফিসার এখনও বহাল তবিয়তে AQ হিসেবে ৭তম পদাতিক ডিভিশন, লেবু খালী ক‍্যান্টনমেন্টে আছেন।

এই অফিসার শুধু বেসামরিক লোক নয়, আমার মতো সামরিক অফিসারকেও অনেক নির্যাতন করেছেন, এমনকি তিনি আমাকে গুম করার জন‍্যেও অনেক চেষ্টা করেছেন এবং আমাকে গুম করার জন‍্য অনুমতিও চেয়েছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি আমাকে গুম খুন করতে ব‍্যর্থ হয়ে DGFI তে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন (প্রমান আছে) এবং কয়েকজন অফিসারকে অনুরোধও করেছিলেন যেন আমাকে উঠিয়ে নেয়া হয়—অথচ এই অফিসার এক সময় আমার অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলেন।’

কুয়েত সফর শেষে দেশে ফিরলেন সেনাপ্রধান