জুমবাংলা ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গত ১৩ এপ্রিল প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের বাড়িসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করার পর লকডাউনে থাকা বাসিন্দাদের মধ্য থেকে ফোন করে প্রশাসনের কাছে বিচিত্র আবদার করেছে অনেকে।
লকডাউনের কারণে সেখানে প্রশাসনের লোকজন প্রতিদিন নিম্মআয়ের মানুষদের গোপনে খাবার সরবরাহ করে আসছিল। এটা দেখে ঐ এলাকার এক চারতলা বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রী প্রশাসনের লোককে বিশাল খাবারের তালিকা ধরিয়ে দেয়। আরেকজন তার পালিত গরুর ঘাস কেটে দেয়ার অবদার করেন প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক টিমকে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করতে গিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম তার এসব বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে যা এখন ভইরাল হয়ে গেছে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম এর সে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘সাবাস বৈদ্যেরবাজার
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সোনারগাঁয়ে প্রথম করোনা সনাক্ত হয়েছিল গত ১৩ই এপ্রিল, বৈদ্যের বাজারে। সেদিন প্রশাসনিকভাবে যা যা করার তার সবটুকুই আপনাদের জন্য গভীর মমত্ববোধ ও দক্ষতার সাথে করেছিলাম আমরা। দ্রুত ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পৌঁছানো, এম্বুল্যান্স পাঠানো, রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো,পরিবারের লোকেদের সাথে কথা বলা প্রতিবেশীদের সাথে কথা,কোয়ারেন্টাইন ও লক ডাউন।
ঠিক তারপরদিন তার প্রতিবেশীরা ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দিলো-আসলে ছেলেটির একটু ঠান্ডা লেগেছে আর কিছুই হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ এসে এমনিতেই ছেলেটিকে ধরে নিয়ে গেছে!! এরপর যথারীতি সবাই অসচেতন হয়ে পড়লো। (পরে গুজব ছড়ানো একজন ব্যক্তিকে জেল ও জরিমানাও করা হয়েছিলো)
সেই লক ডাউনে থাকা প্রতিবেশিদের মধ্যে যারা নিম্ম মধ্যবিত্ত ও দুস্থ, স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে নিয়মিত গোপনে আমরা তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিতাম। এটা দেখে চারতলা পাঁচতলা বাড়ীওয়ালারাও আমাদের তালিকা দিতে শুরু করলো। খুব সুন্দর তালিকাঃ ১। গরুর মাংস ৫ কেজি ২। পাবদা মাছ ১ কেজি ৩। গলদা চিংড়ি ১ কেজি ৪। রূপচাঁদা ১ কেজি ৫। লাল শাক,পাটশাক,লাউ,করল্লা ৬। সারজেল এক পাতা ৭। ডেটল এক বোতল
আমরা বাজার করে দিতে রাজী হলাম কিন্তু উনি টাকা দিতে রাজী না!! খুব রাগ করলেন উনি “টাকা দিলে তো উনিই নিজেই কিনতে পারেন আমরা কেনো!!”
একজন ভদ্র মহিলা বললেন উনার গরুটা দুই তিন দিন ঘাস খায় না। স্বেচ্ছাসেবক টীমকে উনি ঘাস কেটে আনতে বললেন!! গরুর জন্য অন্য খাবার তিনি নিবেন না!!
প্রতিবেশীদের সেদিনের ফেসবুক গুজব আর কোয়ারেন্টাইন না মানা আমাদের কত বড় ক্ষতি করেছে ফলাফলটা দেখুনঃ আমাদের মোট ১১ জন করোনা আক্রান্তের ৪ জনই বৈদ্যেরবাজারের!!
ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেদের দিয়ে সুযোগ বুঝে গরুর ঘাস কাটা ভদ্র মহিলার এই অদ্ভুত খায়েশ…লক্ষ কোটি টাকা জমিয়ে রেখে সুযোগ বুঝে বাজার করিয়ে নেয়া।
নিজেদের সব জ্ঞান ফেসবুকে ঢেলে দিয়ে মার্কজুগারবার্গকে কাঁচকলা দেখিয়ে মুচকি হাসা-“তুই দেখ আমি কে!!” আমাদের এইসব প্রবণতার জন্যই কিনা জানি না রবীন্দ্রনাথ দুঃখভরে লিখে গিয়েছিলেন-
“সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।”
পুনশ্চঃ তবুও তোমাকেই ভালোবাসি সোনারগাঁ, তবুও তোমাকেই ভালোবাসি প্রিয় বাংলাদেশ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।