বেশ বড়সড় এই জলের পাখিটির নাম কোড়া। জলমোরগও বলা যায়। ইংরেজি নাম Kora, Water Cock। বৈজ্ঞানিক নাম Gallicrex cinerea। শরীরের মাপ ৪৪ সেন্টিমিটার। খুবই সুন্দর পাখি। লম্বা পা, লম্বাটে ঘাড়। সাধারণ সময়ে পুরুষ ও মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম। মেয়েপাখির শরীরের মাপ হচ্ছে ৩৯ সেন্টিমিটার।
এক নজরে কোড়া হচ্ছে বাদামি রঙের পাখি। মাথার চাঁদি কালচে। পাখার প্রান্তের পালকগুলো কালো। বাদামি পিঠের ওপর কালচে কালচে ছোপ আছে। বুকে আড়াআড়িভাবে অস্পষ্ট কালচে কালচে সূক্ষ্ম দাগ। পেট ও লেজের তলায় ওই পাথালি দাগ বেশি ঘন ও স্পষ্ট। লেজের আগা তীর্যক। ভয়ে ও আনন্দে ওই লেজ ঘন ঘন দোলায়।
বাসা যখন বাঁধে, তখন পুরুষ পাখিটির রং যায় বদলে। ঘাড়, চিবুক ও পিঠ কালো হয়ে যায়। গলা, বুক ও পেটের রংও হয়ে যায় কালচে। ওই সময় পুরুষ কোড়াকে ভারি সুন্দর দেখায়। চোখ হয় বেশি উজ্জ্বল। ডাকাডাকিও বেড়ে যায় বাসা বাঁধার আনন্দে।
কোড়ার, বিশেষ করে পুরুষ কোড়ার কপালের আলতার মতো লাল রঙের শক্ত বর্মটি ওর সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্মটি আবার কপালের ওপরে প্রায় ৪ সেন্টিমিটারর মতো বাড়ন্ত থাকে, যাকে মনে হয় চোখা শিং। হ্যাঁ, শিং-ই বটে। লড়াইয়ের সময়ে (পুরুষে পুরুষেই লড়াই হয়, কেননা প্রতিটি পুরুষ কোড়া একটা নির্দিষ্ট এলাকা নিয়ে রাজত্ব করে। তার রাজত্বে অন্য পুরুষ কোড়া ঢুকলেই লড়াই লেগে যায়।) কপালের ওই বর্ম আর শিং ওরা ব্যবহার করে। ও রকম লড়াই আমি গাছে বসে দেখেছি। সামান্য ঠোকাঠুকির শব্দও শোনা যায়। মেয়ে কোড়ারও বর্ম আছে। তবে সেটা ছোট, মাথার ওপরে জেগেও থাকে না।
কোড়ার চোখের রং লাল। লম্বা পা ও পায়ের লিকলিকে লম্বা চারটে আঙুলের রঙও লাল। ঠোঁটও লাল। জিভের রং পান্না-সবুজ। পায়ের আঙুল লম্বা হওয়ায় ওরা জলজ উদ্ভিদের ওপর দিয়ে যেমন হাঁটতে পারে, তেমনি প্রয়োজনে ডুব-সাঁতারও দেয়। অসম্ভব চালাক।
এই কোড়া পাখিরা ঘাস, পাটক্ষেত, ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়েই কেবল হেঁটে বেড়ায়। না-পারতে উড়বে না। বিপদের গন্ধ পেলে লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্রুত হেঁটে দূরে সরে যাবে। বাচ্চা হওয়ার খুশিতে প্রচণ্ড রকম ডাকাডাকি করে, সে জন্য মানুষ বুঝে ফেলে বাসাটি কোন এলাকায় আছে এবং সহজেই তারা বাসা খুঁজে ডিম ও বাচ্চা নিয়ে যায়। কিশোরবেলায় আমি নিজেও বহুবার কোড়ার ডিম এনে ভেজে খেয়েছি, বাচ্চা পুষেছি।
ভালো পোষ মানে এবং পোষা কোড়া দিয়ে বুনো কোড়া শিকার করা যায়। বাংলাদেশে পোষা কোড়া আজো আছে। তবে কমে গেছে আগের চেয়ে। ভালো পোষ মানলে ছেড়ে দিয়েও পোষা যায়। প্রভুর ইশারায় উড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বুনো কোড়ার ওপর। লড়াই বাঁধে এবং পায়ে পা আঁকড়ে ধরে, ছাড়ে না সহজে। এমনিতেই কোড়ারা তুখোড় লড়াকু পাখি। ওরা খায় কচি কচি জলজ ঘাস, গুল্ম, ধান ও ঘাসের বীজসহ পোকা-মাকড়, শামুক ব্যাঙ ইত্যাদি।
আজ থেকে ৩০ বছর আগেও বাংলাদেশে প্রচুর কোড়া ছিল, কমে গেছে অনেক। এখন আর শাওন-ভাদ্রে শোনা যায় না ওদের উঁচু কণ্ঠের মন-ভুলানো সুরেলা ডাক। কমে গেছে ওদের আবাসভূমি, মরছে শিকারিদের হাতে। উপকারী এই পাখিটিকে টিকিয়ে রাখা বড়ই জরুরি, নইলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ওরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।