১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্র্যাকের জন্ম, যা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি এনজিও। স্বাধীনতার পর সিলেটের শাল্লায় ধ্বং’সস্তূ’পের মধ্যে বসবাসরত লোকজনকে দেখতে যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
সেখানে গিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন শাল্লায় কাজ করবেন। এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের দরিদ্র, অসহায়, সব হারানো মানুষের ত্রাণ ও পু’নর্বা’সন’কল্পে শুরু করলেন ‘বাংলাদেশ রিহানিলিয়েশন অ্যাসিসটেন্স কমিটি’ সংক্ষেপে যা ‘ব্র্যাক’ নামে পরিচিত।
১৯৭৩ সালে সাময়িক ত্রাণ কার্যক্রমের গণ্ডি পেরিয়ে ব্র্যাক যখন উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে, তখন ‘BRAC’-এই শব্দ সংক্ষেপটির যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়, সেটি হলো ‘বাংলাদেশ রুরাল এডভানন্সমেন্ট কমিটি’।
বর্তমানে ব্যা’খ্যামূলক কোনো শব্দসমষ্টির অপেক্ষা না রেখে এই সংস্থা শুধুই ‘ব্র্যাক’ নামে পরিচিত। কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ, এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হয়।
বোর্ড ফজলে হাসান আবেদকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল হন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছর স্যার ফজলে আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তাকে প্রতিষ্ঠানটির ইমেরিটাস চেয়ার নির্বাচিত করা হয়।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে ২০১৭ সালে গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকালে স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যু’দ্ধ শেষ হলে দেশে ফিরে আসি আমি। ভেবেছিলাম, যু’দ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলবে। কিন্তু খুব দ্রুত দেশ স্বাধীন হলো। এসে দেখলাম, দেশের অবকাঠামোগুলো ধ্বং’স হয়ে গেছে এবং মানুষের জীবনজীবিকার উপায়গুলো সম্পূর্ণ ভে’ঙে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা গ্রাম-নগরবন্দর জনপদ সব জ্বা’লিয়ে-পু’ড়িয়ে ছা’রখা’র করে দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘যু’দ্ধ চলাকালেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দেশ স্বাধীন হলে অসহায় ও দু’র্গ’ত মানুষের কাছে গিয়ে ত্রা’ণ ও পু’নর্বা’সনের কাজ করব। এক কোটি লোক যু’দ্ধের সময় ভারতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা ফিরে আসতে শুরু করল। ছিন্নমূল সেই মানুষগুলোর তখন জরুরি ভিত্তিতে ত্রা’ণ ও পুনর্বাসনের প্রয়োজন।
ত্রা’ণকর্মকা’ণ্ড পরিচালনার অভিজ্ঞতা আমার আগেই ছিল। আমি সহজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। লন্ডনে আমার একটি নিজস্ব ফ্ল্যাট ছিল। যু’দ্ধ চলার সময় সেটি বিক্রি করে টাকা নিজের কাছে রেখেছিলাম। ওই টাকাটা দেশে নিয়ে এসে ত্রা’ণকার্য পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলাম উত্তর-পূর্ব সিলেটের প্রত্যন্ত থানা শাল্লার পুরো এলাকায়। পার্শ্ববর্তী দিরাই ও বানিয়াচং থানার কয়েকটি ইউনিয়নে আমাদের কাজ শুরু হলো। এভাবেই সূচনা হলো ব্র্যাকের।
পরে ত্রা’ণকাজের সীমিত পরিধি থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে এই সংস্থার দীর্ঘ অভিযাত্রার সূচনা ঘটে।’
সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকার জন্য ফজলে হাসান আবেদ র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুবুল হক পুরস্কার, গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার এবং শিক্ষাক্ষেত্রের ‘নোবেল’ বলে খ্যাত ইয়াইদান পুরস্কার লাভ করেন।
দারিদ্র্য বিমো’চন এবং দরিদ্রের ক্ষ’ম’তায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘নাইটহুড’ এ ভূষিত করে। ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন জমিদার। তার মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।