বেঁচে থাকার জন্য খাবারের সঙ্গে লবণ প্রয়োজন। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে লবণের কথা বলা বাহুল্য। লবণ বা নুনের সঙ্গে মানুষের পরিচয় প্রাচীনকাল থেকে। বলা হয়, প্রাচীনকালে বাংলার গ্রামগুলো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সমৃদ্ধ। একমাত্র লবণ ছাড়া জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব তারা তৈরি করতে পারত।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও এশিয়ার অনেক দেশে লবণ দিয়ে পণ্য বিনিময়ের প্রথা চালু ছিল। আর ইথিওপিয়া ও তিব্বতে তো মুদ্রা হিসেবে সরাসরি লবণ ব্যবহৃত হতো। সে যুগে রোমান সেনাদের বেতন দেওয়া হতো লবণের ক্রয়মূল্য হিসাবে। অর্থাৎ, একজন সেনা কতটুকু লবণ কিনতে পারবে, সে অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো। সেই ঘটনার সাক্ষী হিসেবেই ইংরেজিতে স্যালারি (Salary) শব্দের উৎপত্তি। লাতিন শব্দ স্যালারিয়াম (Salarium) থেকে এ শব্দ এসেছে।
প্রাচীনকালে খনি থেকে তোলা লবণ ব্যবহার করত মানুষ। এখন সাগরের পানি থেকে সহজেই লবণ উৎপাদন পদ্ধতি আমাদের জানা। তাই এককালের এ মহার্ঘ বস্তু এখন সব দেশে সহজলভ্য।
খাবার লবণের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। এক অণু সোডিয়াম ও এক অণু ক্লোরিন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সোডিয়াম ক্লোরাইডের ক্রিস্টাল বা দানা তৈরি করে। সাগরের পানির প্রতি লিটারে ৩০ গ্রাম বিভিন্ন লবণ মিশে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, ক্যালসিয়াম সালফেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি।
দেহের স্বাভাবিক কাজের জন্য লবণ অপরিহার্য। তাই প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে লবণ গ্রহণ করতে হয়। আবার গলার কাছে রয়েছে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় থাইরক্সিন হরমোন, যা মানবদেহের বিপাক ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ গ্রন্থির স্বাভাবিক কাজের জন্য আয়োডিন অপরিহার্য। প্রাকৃতিক খাবার থেকেই আমরা আয়োডিন পাই।
কিন্তু অনেক এলাকায় (বিশেষ করে সমুদ্র থেকে অনেক দূরের এলাকা) খাবারে আয়োডিনের অভাব দেখা যায়। এতে গলগন্ডসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। আবার আয়োডিনের অভাবে ব্যাহত হয় শিশুদের মানসিক বিকাশও। সে কারণেই বর্তমানে খাবার লবণে আয়োডিন যোগ করা হয়।
লবণের প্যাকেটের গায়ে আয়োডিন আছে বলে দাবি করলেও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আয়োডিন ছাড়াই লবণ বিক্রি করে। সহজ এক পরীক্ষায় লবণে আয়োডিন আছে কি না, তা জানা সম্ভব। একটু লবণ নিয়ে তাতে একটু লেবুর কয়েক ফোঁটা রস দিন। কিছুক্ষণ পর লবণ নীল হলে বুঝতে হবে লবণে আয়োডিন আছে। আর যদি তা না হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে ওই লবণে কোনো আয়োডিন নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।