জাতীয় ডেস্ক: পুলিশের একজন সিনিয়র এএসপিকে চিকিৎসার নামে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচিত ‘মাইন্ড এইড’ নামের ক্লিনিকটি মানসিক রোগীর চিকিৎসার কোনও প্রতিষ্ঠান নয়৷ এই প্রতিষ্ঠানটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা করে আসছিলো৷ খবর: ডয়চে ভেলে৷
মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স দেয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ তবে কেন্দ্রটি মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্যও লাইসেন্স চেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আট মাস আগে৷ অধিদপ্তর তাদের লাইসেন্সের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও তারা মানসিক রোগীর ‘চিকিৎসা’ অব্যহত রাখে৷
শুধু তাই নয়, তারা নিরাময় কেন্দ্রটির নামও প্রতারণামূলভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছিল৷ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে তাদের নিবন্ধিত নাম হলো ‘মাইন্ড এইড মানসিক এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’৷ কিন্তু তাদের সাইন বোর্ডে লেখা ‘মাইন্ড এইড, মাইন্ড কেয়ার ইন্সটিটিউট’৷
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাইন্ড এইড মানসিক এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স পায়৷ বেডের সংখ্যা উল্লেখ আছে ৩০টি৷ নিয়াজ মোর্শেদ ম্যানেজিং পার্টনার৷ লাইসেন্স নাম্বার: ৯৯৫৷ ঠিকানা: রোড নং-১৯, বাড়ি নং-২৮১, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা৷ সিরিয়াল নাম্বার-৩০৯৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৩২৪টি এ ধরনের নিবন্ধিত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে৷
ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মাইনুল হাসান জানান, তারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লিনিকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল৷ কিন্তু শর্তপূরণ না করায় আমরা লাইসেন্স দেইনি৷ কার্যত মানসিক রোগীর চিকিৎসা বা ক্লিনিক পরিচালনার জন্য তাদের কোনও লাইসেন্স নেই৷ গত দুই বছর ধরে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল তারা৷
তিনি স্বীকার করেন, এরকম অনেক অবৈধ ক্লিনিক আছে৷ তার কথা, এরকম অনেক অবৈধ ক্লিনিক আছে সত্য৷ কিন্তু আমরা কী করব? এটা দেখার দায়িত্ব তো আমাদের না৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখতে পারে৷ আমরা যাদের লাইসেন্স আছে শুধু তাদের কাজ মনিটরিং করি৷ লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিই৷
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কীভাবে লাইসেন্স দেয় এবং ওইসব কেন্দ্রের কাজের পরিধি কী তা জানকে অনকে কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ কেউই দায়িত্ব নিতে চান না৷ একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দেন৷ অবশেষে পাওয়া যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) ঊর্মি দে-কে৷
তিনি জানান, তার হাত দিয়েই ‘মাইন্ড এইড মানসিক এবং মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র’ শুধু মাদকাসক্ত রোগীর পুনর্বাসনের অনুমোদন পায়৷ প্রতিষ্ঠানটি আর কোনও মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত নয়৷ মানসিক রোগের চিকিৎসা করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলাদা লাইসেন্স লাগবে৷
সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মাইনুল হাসান বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো শুধু পুনর্বাসনের জন্য৷ সেই লাইসেন্স দেয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ কিন্তু এ নিয়ে কোনও ধরনের ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা দিতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স লাগবে৷
ঊর্মি দে স্বীকার করেন, অনেক মাদক নিরাময় কেন্দ্র মাদকাসক্তদের চিকিৎসার নামে মারপিট করে৷ অনেকেই অভিযোগ করেন৷ তিনি জানান, কিন্তু আমরা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে কোনও প্রমাণ পাই না৷ তাই ব্যবস্থা নিতে পারি না৷
বরিশালে কর্মরত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম মানসিক চাপে ভুগছিলেন৷ সিনিয়র কর্মকর্তাদের পরামর্শে সোমবার (৯ নভেম্বর) সকালে তিনি ঢাকা এসে প্রথমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন৷ সেখানে চিকিৎসার খারাপ অবস্থা দেখে কয়েক জনের পরমর্শে সকালেই তাকে ‘মাইন্ড এইড’ হাসপাতালে নেয়া হয় বলে জানান তার বড় ভাই রেজাউল করিম৷ এর কয়েক ঘন্টা পর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷
রেজাউল করিম জানান, সকাল ১১টার দিকে সে দোতলার বাথরুমে গেলে তাকে প্রথমে একটি কক্ষে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়৷ ব্যর্থ হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে৷
তিনি বলেন, আমার ভাই মেন্টাল স্ট্রেসে ছিলেন৷ কোনও মানসিক রোগীও ছিলেন না৷ তার সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো৷ আমরা মানসিক চাপ কমাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম৷ আমার ভাই মাদকাসক্ত ছিল না৷ আর ওটা যে মাদক নিরাময় কেন্দ্র তাও আমরা জানতাম না৷ আমাদের অনেকেই বলেছিলেন ওটা মানসিক চিকিৎসার ভালো হাসপাতাল৷
এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় কথিত হাসপাতালটির পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদসহ এপর্যন্ত ১১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।