বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা প্রায় ১৪২ বছর ধর গবেষণা করছেন সূর্যের থেকে ছুটে বের হওয়া আগুনের সুঁই নিয়ে। শেষমেশ সেই রহস্য ভেদ করেছেন ভারতীয় গবেষক তন্ময় সামন্ত।
সূর্যের রহস্যময় এক ধরনের ‘সুঁই’ রয়েছে যার নাম ‘স্পিকিউল্স’। প্রচণ্ড গতিবেগে সুঁইগুলি সূর্যের পিঠের কিছুটা ওপর থেকে বেরিয়ে হুশ্ করে উপরে উঠে গিয়ে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা একলাফে কয়েক লাখ গুণ বাড়িয়ে দেয়। তার বায়ুমণ্ডলকে করে তোলে ভয়ঙ্কর।
সূর্যের এই স্পিকিউলসের তথ্য বিজ্ঞানীরা পায় ১৪২ বছর আগে। কিন্তু কেন এমন হয় তা জানতে পারেনি। ফলে চলতে থাকে গবেষণা। দীর্ঘ সময় পর বিষয়টি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন তন্ময়।
সম্প্রতি তন্ময়ের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’এর নভেম্বরের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্সের বরাত দিয়ে রোববার (০৮ ডিসেম্বর) এ খবর দিয়েছে কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
তন্ময়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, সূর্যের একেবারে অন্দরে যেখানে পরমাণু চুল্লি আছে, সেখানকার তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি কেলভিন। সেখান থেকে সূর্যের পিঠ বা ফোটোস্ফিয়ারের দূরত্বটা ৭ লক্ষ কিলোমিটার। যেখানকার তাপমাত্রা ৫ হাজার ৭০০ থেকে ৬ হাজার ডিগ্রি কেলভিন।
কিন্তু সূর্যের পিঠ থেকে ২ হাজার কিলোমিটার উপরে থাকা তার বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তরটিকে তাতিয়ে তুলল রীতিমতো গনগনে ১০ হাজার বা তারও কিছু বেশি ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রায়। ওই স্তরের নাম ‘ক্রোমোস্ফিয়ার’।
ক্রোমোস্ফিয়ার থেকে শুরু হল সূর্যের বায়ুমণ্ডল। ফোটোস্ফিয়ার থেকে যার শেষ প্রান্তটার দূরত্ব প্রায় ৭০ লক্ষ কিলোমিটার।
সূর্যের অন্দরে থাকা পরমাণু চুল্লির তুলনামূলক ভাবে কাছে থাকা সত্ত্বেও ফোটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা যেখানে মাত্র ৬ হাজার ডিগ্রি কেলভিন, সেখানে পরমাণু চুল্লি থেকে তার প্রায় ১০ গুণ দূরত্বে থাকা করোনার তাপমাত্রা কীভাবে একলাফে বেড়ে হয়ে যায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি কেলভিন? এ নিয়েই চলে গবেষণা।
ক্রোমোস্ফিয়ার থেকে কীভাবে ছিটকে বেরিয়ে আসে সূর্যের সূই?
এক, করোনায় সূর্যের বিপরীতধর্মী (ধনাত্মক ও ঋণাত্মক) দু’ধরনের চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি এক অন্যের কাছে এসে নিজেদের ধ্বংস করে ফেললে বিপুল পরিমাণে চৌম্বক শক্তি জন্ম হয়। যা পরিবর্তিত হয় তাপশক্তি ও গতিশক্তিতে। করোনার প্রচণ্ড তাপমাত্রার অন্যতম কারণ এটি, মনে করেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
দুই, সূর্যের পিঠ বা ফোটোস্ফিয়ারে যেখানে চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি রয়েছে, সেখান থেকে এক ধরনের তরঙ্গ (অ্যালফ্ভেন ওয়েভ) বেরিয়ে আসে। ওই তরঙ্গের জন্ম হয় ফোটোস্ফিয়ারের নীচে ঢুকে যাওয়া চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির নীচের অংশগুলির মধ্যে সব সময় কাঁপাকাঁপি চলে বলে। ওই তরঙ্গ করোনায় পৌঁছে তার তাপমাত্রা কয়েক লক্ষ গুণ বাড়িয়ে দেয়। সেই তরঙ্গগুলি যদি লম্বায় খুব বড় হয়, তা হলে তা সূর্যের বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে বাইরের মহাকাশেও ছড়িয়ে পড়ে। তরঙ্গ খুব শক্তিশালী হলে তা সৌরবায়ুর (সোলার উইন্ড) গতিবেগ অসম্ভব বাড়িয়ে দিতে পারে।
তিন, ফোটোস্ফিয়ারের কিছুটা উপরে থাকা ক্রোমোস্ফিয়ারেও বিপরীতধর্মী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি কাছে এসে একে অন্যকে ধ্বংস করে দেওয়ার ফলে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড চৌম্বক শক্তি তাপ ও গতিশক্তিতে বদলে যায়। তখনই ক্রোমোস্ফিয়ার থেকে ওই সূচগুলির জন্ম হয়। যারা অসম্ভব জোরে ছুটে গিয়ে করোনায় পৌঁছে তার তাপমাত্রা অতটা বাড়িয়ে দেয়। আবার সেই সূ্ইগুলি খুব বেশি ক্ষণ টিঁকে থাকে না। ১০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যে সূচগুলি মিলিয়ে যায়। তাদের আর দেখা যায় না।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.