জুমবাংলা ডেস্ক : বাজারে মসলা ও মসলা জাতীয় পণ্যের কোনো সংকট নেই। কোরবানি সামনে রেখে আমদানি হয়েছে দ্বিগুণ। এর পরও ঈদের আগেই লাগামহীনভাবে বাড়ছে মসলার দাম। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, গোলমরিচ এবং রসুন-পিয়াজের মতো মসলার দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিদিনই ট্রাকে করে আসছে আমদানির মসলা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা। লবঙ্গের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রতি কেজিতে। দারুচিনি, তেজপাতা ও ধনিয়ার দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। আগেই বেড়ে যাওয়া আদা ও পিয়াজের দাম গত কয়েকদিনে আরেক দফা বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার ঈদের পর থেকেই পাইকারি বাজারে বাড়তে শুরু করে মসলার দাম। প্রায় প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের আগে এভাবে দাম বেড়ে যায়।
এবার আরও আগে থেকেই বাড়তে শুরু করে। রাজধানীর কাওরান বাজার সহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত বছরের এ সময় জিরার কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে লবঙ্গের কেজি ছিল ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা।
কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। গত বছরের এই সময়টাতে বিক্রি হয় ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা কেজি দরে। একইভাবে গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম বেড়ে এখন হয়েছে ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা। অর্থাৎ সাত দিনের ব্যবধানে দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এক বছর আগে দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। সাত-আট দিন আগেও দাম ছিল প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। এক বছর আগে পণ্যটি কেনা যেত ১২০ থেকে ১৭০ টাকায়।
সূত্র জানায়, চলতি মে মাসের প্রথম ২০ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪১৪.৩৭ টন জিরা আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮০.৯৫ টন। অথচ সংকট দেখিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জিরার দাম বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানি সামনে রেখে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২০শে মে পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৩৮ টন দারুচিনি, ৪২৩ টন লবঙ্গ, ৮৫৮ টন এলাচ, ১ হাজার ২৫৩ টন জিরা, ১০৬ টন জয়ত্রী এবং ৪৯৩ টন গোলমরিচ আমদানি হয়েছে। অবশ্য গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জিরা এবং এলাচ কিছুটা কম আমদানি হলেও দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে অনেক মসলা। সবমিলিয়ে লবঙ্গ ৩০ শতাংশ, মরিচ ১১ শতাংশ ও রসুনের আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
মসলার দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে অজুহাতের যেন শেষ নেই। রপ্তানিকারক দেশগুলোর মসলা উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত যেমন দেয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকটে এলসি বা ঋণপত্র খোলার জটিলতা। বাংলাদেশ মসলা ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট অমর কান্তি দাস বলেন, ভারত, আফগানিস্তান ও ইরানে জিরার ফলন কম হয়েছে। ফলে পণ্য ঘাটতির কারণে দাম যেকোনো সময় বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমদানিকারকের কোনো দোষ নেই।
ডলারের দাম বাড়ার কারণে মসলার দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, আগে এক ডলারের জন্য আমদানিকারককে পরিশোধ করতে হতো ৮২ থেকে ৮৪ টাকা। এখন করতে হচ্ছে ১১১ টাকার মতো। এ ছাড়া শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে মোট দামের ওপর। ডলারের দাম বাড়ার কারণে শুল্কও আগের তুলনায় বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও শুল্কের পরিমাণ বেশি আসার কারণে মসলার আমদানি খরচ বেড়েছে। এ কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে। এনায়েত উল্লাহ বলেন, টাকার মান ধরে রাখতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। এজন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী নন; বরং তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে শুল্ক মওকুফ করলে মসলার দাম কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, আদার কেজি এখন ৫০০ টাকায় ঠেকেছে। ১ মাস আগে বাজারে যে চীনা আদার কেজি ছিল ২২০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। চীনা আদা বাদেও ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা। পিয়াজের দাম এখন ৭৫-৮৫ টাকা, যা ১০ দিন আগেও ছিল ৬০ টাকা। কেজিতে পিয়াজের দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। আর দেশি আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি।
রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চীনা আদা ৫০০ টাকা, পিয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ দিন আগে আদা ৪৬০ টাকা ও পিয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে যে আদা আমদানি হয় সেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ চীনা আদা এবং বাকিগুলো অন্যান্য দেশের। তবে দেশে চীনা আদার চাহিদা বেশি। কয়েকদিন ধরেই চীনের আদা আসছে না। তাই বাজারে আদার কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। চীনা আদা বাজারে নেই বললেই চলে।
আরেক আদা ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, দেশে এ বছর আদার উৎপাদন কম হয়েছে। আমদানিও কম হয়েছে। এ জন্য দাম অনেক বেশি। কোরবানি ঈদের আগে আদার দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।