গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল হুল্লোড় আর দুয়োর সুর। লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। তিনি তো স্রেফ মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাওয়ার লোক নন। দু হাত উঁচিয়ে তালি দিলেন। ‘থামস আপ’ দেখালেন বারবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, খুশি হয়ে নয়, কটাক্ষ করেই তার অমন অভিব্যক্তি। আয়ারল্যান্ড কোচ হেইমির হালগ্রিমসনের মুখোমুখি হয়েও উত্তপ্ত হয়ে কিছু বলতে দেখা গেল তাকে।

ম্যাচের আগে অবশ্য রোনালদো কথা দিয়েছিলেন, যতই দুয়ো দেওয়া হোক তাকে, একদম ভালো ছেলেটি হয়ে থাকবেন তিনি। কিন্তু মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড দেখে তিনি মাঠ ছাড়েন ৬১তম মিনিটে। আয়ারল্যান্ডের কাছে ২-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হয় পর্তুগালের।
তুলনামূলক দুর্বল দল আর্মেনিয়ার বিপক্ষে রোববার জিতলেই অবশ্য বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলবে তারা। এমনকি জিততে না পারলেও কাজ হয়ে যেতে পারে, যদি অন্য ম্যাচের ফল পক্ষে আসে। তবে ম্যাচটিতে খেলতে পারবেন না রোনালদো।
শেষ নয় এখানেই। বড় শঙ্কা আছে বিশ্বকাপের শুরুতে তার খেলা নিয়েও। তার ফাউলের শিকার হন আইরিশ ডিফেন্ডার ডারা ও’শে। শুরুতে রেফারি হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন। পরে আইরিশদের প্রতিবাদের মুখে মাঠের পাশে মনিটরে চোখ রাখেন রেফারি। দেখা যায়, আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই মেরেছেন রোনালদো। হলুদ কার্ড তখন বদলে যায় লাল কার্ডে।
ক্লাব ক্যারিয়ারে ১৩ বার লাল কার্ড পেলেও জাতীয় দলের হয়ে ২২৬ ম্যাচে তার প্রথম লাল কার্ড এটি। সেটিই গুরুতর কারণে। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, গুরুতর ফাউলের জন্য অন্তত দুই ম্যাচের নিষধাজ্ঞা পেতেই হয়। মাত্রা অনুযায়ী সেই সংখ্যা বাড়তে পারে আরও। রোনালদো যদি দুই ম্যাচও নিষিদ্ধ হন, তাহলে ২০২৬ বিশ্বকাপে পর্তুগালের প্রথম ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন না। কারণ, ফিফার এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে কেবল প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে, কোনো প্রীতি ম্যাচে তা বিবেচিত হবে না।
পর্তুগালের কোচ রবের্তো মার্তিনেস অবশ্য মনে করেন, এতটা গুরুতর ফাউল এটা ছিল না। ক্যামেরার অবস্থানের কারণে কনুই মারার মতো দেখাচ্ছে বলে ধারণা তার।
“এই লাল কার্ড একজন অধিনায়কের, ২২৬ ম্যাচে আগে কখনও যাকে এভারে বের হতে হয়নি। আমার মনে হয়, এজন্য তার কৃতিত্ব প্রাপ্য। আজকে আমার মনে হয়, এই সিদ্ধান্তটি একটু কঠোর হয়ে গেছে, কারণ তার কাছে দলই আগে। বক্সের ভেতর ৬০ মিনিট বা ৫৮ মিনিট ধরে তাকে জাপটে রাখা হয়েছে, টেনে ধরা হয়েছে, ধাক্কা দেওয়া হয়েছে… এরপর সে অবশ্যই চেষ্টা করেছে ওই ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিতে…।”
“আমার মনে হয়, যতটা খারাপ দেখিয়েছে, ঘটনা ততটা খারাপ নয়। আমার মনে হয় না সে কনুই মেরেছে। আমার মনে হয়, পুরো শরীরই ছিল। কিন্তু ক্যামেরা যে অ্যাঙ্গেলে ছিল, সেখান থেকে কনুই মারার মতো মনে হয়েছে। যাহোক, আমরা মেনে নিচ্ছি।”
পর্তুগাল কোচ ইঙ্গিত দিলেন প্রতিপক্ষ কোচের দিকেও। আয়ারল্যান্ডের কোচ হালগ্রিমসন ম্যাচের আগে বলেছিলেন, রোনালদো যেন রেফারির ওপর বেশি প্রভাব রাখতে না পারেন। পর্তুগাল কোচ ম্যাচের পর বললেন, হালগ্রিমসনের ওই বক্তব্য রেফারির সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।
“একটি ব্যাপারই অস্বস্তির কাঁটা হয়ে বিঁধছে, আপনাদের কোচ গতকালকে (বুধবার) সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন রেফারির ওপর প্রভাব বিস্তারের কথা… এরপর বিশালদেহী সেন্টার-হাফ নাটকীয়ভাবে মাঠে পড়ে গেল ক্রিস্তিয়ানোর শরীরের ধাক্কায়…।”
রোনালদো নিজেও যে হালগ্রিমসনের সেই কথা পছন্দ করেননি, সেটি তো বলাই বাহুল্য। লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেটি তিনি প্রকাশও করেছেন।
ম্যাচের পর আইরিশ কোচকে জিজ্ঞেস করা হয়, রোনালদো তাকে কী বলছিলেন তখন। আইরিশ কোচ সেখানেও খোঁচা দিয়ে রাখলেন।
“রেফারির ওপর চাপ তৈরি করায় সে আমার প্রশংসা করছিল। অথচ সে লাল কার্ড দেখেছে মাঠে তার আচরণের কারণে। আমার এখানে কিছু করার ছিল না… যদি না আমি তার মাথায় ঢুকে বসে থাকি…।”
ম্যাচের পর রোনালদোর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হালগ্রিমসনের সপাট উত্তর, “সে বেরিয়ে আসার সময় যথেষ্ট কথা হয়েছে আমাদের। আর দরকার নেই। কথা বলারও কিছু নেই। আমি বরং বলব, তার এক মুহূর্তের বোকামির ব্যাপার ছিল সেটি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



