জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর মুগদায় ছিনতাইয়ের সময় রিকশা থেকে ছিটক পড়ে তারিনা বেগম লিপার মারা যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে পরদিন দেখেন ছিনতাইকারীরা। এরপর থেকে তারা মিরপুরে গা ঢাকা দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। রবিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বাতেন বলেন, পুলিশের গোয়েন্দা পূর্ব বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে মুগদায় ছিনতাইয়ের সময় তারিনা বেগম লিপা হত্যায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. মিজুয়ান মিয়া, শেখ লিটন, মো. আবদুল মজিদ ও মো. রফিক হাওলাদার। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দুটি ছুরি ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেট কার এবং ভিকটিমের একটি ট্যাব ও নগদ এক হাজর ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাতেও এই সংঘবদ্ধ চক্রটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতির সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
আবদুল বাতেন বলেন, গ্রেপ্তাররা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট কার ব্যবহার করে রিকশা যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাগ ছিনতাই করে।
মিজুয়ান মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মুগদা এলাকার তারিনা বেগম লিপার ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় তারা জড়িত ছিলেন। তারা খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে কমলাপুর স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি অবস্থান করছিলেন।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে লিপা রিকশায় করে যাওয়ার সময় তার হাতে থাকা ব্যাগটি দেখে তা নেয়ার জন্য টার্গেট করেন এবং প্রাইভেটকার দিয়ে রিকশাটি অনুসরণ করতে থাকেন। পরে দক্ষিণ মুগদার ইউনিক বাস কাউন্টার অতিক্রম করার পরে তারা লিপার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে টান দেন। এ সময় ভিকটিম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিকশা থেকে পড়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান।
মিজুয়ান জানান, এসময় তাদের বড়ভাই মনা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পরে তারা টয়েনবি রোড ফকিরাপুল, মতিঝিল, মিরপুর টেকনিক্যালে আরও একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটান। এরপর তারা বাসায় ফিরে যান। গণমাধ্যমে প্রচারিত রিপার মৃত্যু সংবাদ শুনে তারা মিরপুরে বেশ কয়েক দিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, এ ঘটনায় জড়িত মনা পলাতক আছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার শেখ লিটনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা রয়েছে। এছাড়াও পলাতক মনার বিরুদ্ধেও চারটি মামলা আছে।
ডিএমপির এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়, তাদের সুবিধামত স্থানে রাতে বা ভোররাতে রাস্তায় চলাচলকারী ব্যক্তিদের গতিরোধ করে অস্ত্র ও ছরির মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যায়। গতকাল রাতেও তারা ছিনতাইযের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঢাকায় যারা প্রাইভেটকারে ছিনতাই করে তারা যদি ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি না নেয় তাহলে শনাক্ত করা কঠিন। আর ছিনতাইকারীরাও টহল পুলিশ কিংবা পুলিশ পেট্রোল গাড়ির সামনে ছিনতাই করে না। তবে ছিনতাই এবং নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় পুলিশ আরও বেশি প্রস্তুত থাকবে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাম কিবরিয়া ও তার স্ত্রী তারিনা বেগম লিপা দুই সন্তানসহ কমলাপুর রেলস্টেশনে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের একটি চক্র লিপার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



