নিজস্ব প্রতিবেদক: অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকালীন লুঙ্গী পরে থাকায় দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়াও একই পরীক্ষায় অসুদাপায় অবলম্বনের অভিযোগে আরও ২ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং আরেক শিক্ষার্থীর নির্দিষ্ট সময়ের আগে খাতা জমা না নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ফুড প্রসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে এই ঘটনা ঘটে।
এমন ঘটনার পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে পোস্ট করেন। একজন লিখেছেন লুঙ্গী পরে পরীক্ষা দিলে যদি এক্সপেল হতে হয় তাহলে হাফপ্যান্ট পড়ে পরীক্ষা দিলো যারা তাদের কী হবে? আর একজন লিখেছেন লুঙ্গী পড়ে পরীক্ষা দিলে এক্সপেল করতে হয়। হায়! সেলুকাস কী বিচিত্র হাবিপ্রবি!
তবে অনুষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লুঙ্গি পরার জন্য নয়, পরীক্ষার হলে (ভার্চুয়াল) ‘নিয়ম অনুসরণ না করা’ এবং অসদুপায় অবলম্বন করার কারণেই ঐ শিক্ষার্থীরা বহিষ্কার হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জেনারেল ক্যামিস্ট্রি কোর্সের (কোর্স কোড CHE-111) পরীক্ষা ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া ওই অনলাইন পরীক্ষার কয়েক মিনিটের মধ্যে ইম্প্রুভ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ফাহাদ (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রথম বহিষ্কার করা হয়।
ফাহাদ জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাকে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ঠিক করতে বলা হয়। তখন ক্যামেরা উপর-নিচ করার সময় আমার লুঙ্গি স্যারের দৃষ্টিগোচর হয়। তখন স্যার লুঙ্গি নিয়ে কথা তোলেন। এ ছাড়াও আমাকে স্যার কয়েকবার ডাকলে আমি না শোনায় স্যার আমাকে পরীক্ষার হল (জুম মিটিং) থেকে রিমুভ করে দেন এবং বহিষ্কার করেন।’
তার মিনিট দশেক পর বহিষ্কার করা হয় ২০ তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী সামিউলকে (ছদ্মনাম)।
তিনি জানান, ‘আমি যেখানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম তার পেছনে জানালা থাকায় প্রচুর আলো আসছিল। ক্যামেরায় আমার ফেস ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিলো না। তখন স্যার আমাকে জানালায় পর্দা টেনে দিতে বললে আমি উঠে যাই। জানালা বন্ধ করার সময় স্যার আমার লুঙ্গি দেখতে পান। তারপর ড্রেসকোডের কথা তুলে স্যার আমাকে জুম থেকে বের করে দেন। আমি পরে স্যারকে কল দিলে স্যার জানান, আমি বহিষ্কার।’
এ ছাড়াও ছামিউল (ছদ্মনাম) আরও জানায়, ‘আমার আগে একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সে-ও লুঙ্গি পরা ছিল। তাকে যেহেতু আগেই একই কারণে বহিষ্কার করা হয়ে গেছে, আর আমিও যেহেতু লুঙ্গি পরা ছিলাম তখন ওই শিক্ষার্থীর সাথে যেন বেইনসাফি না হয় সেজন্য আমাকেও বহিষ্কার করা হয়।’
লুঙ্গি পরার দায়ে বহিষ্কৃত আরেক শিক্ষার্থী ২০ ব্যাচের রিহাল (ছদ্মনাম) জানান, তিনি পরীক্ষা চলাকালে ক্যামেরার বাইরে তাকিয়েছিলেন। যে কারণে তাকে তার রুমের চারপাশ দেখাতে বলা হয়। চারপাশ দেখানোর সময় তার পরনের লুঙ্গিও দৃষ্টিগোচর হয় এবং তাকেও জুম মিটিং থেকে বের করে দেওয়া হয়।
রিহাল বলেন, ‘পরে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাজ্জাত হোসেন সরকার স্যারকে কল করলে তিনি বলেন- আমাকে কেন কল করেছো? এই বিষয়টার সম্পূর্ণ দেখভাল করার দ্বায়িত্ব পরীক্ষা সুপারভাইজারের। পরে সুপারভাইজারকে কল করলে প্রথমে তিনি রিসিভ করেন, কিন্তু আমার কথায় কনভিন্স হননি। কল কেটে দেন। এরপর আমি অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি আর ধরেননি, এক পর্যায়ে আমার নাম্বারটি ব্লক লিষ্টে রাখেন।
এই তিন শিক্ষার্থীর এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা তাদের আরও কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে। তারাও বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথমে যখন রিহালকে (ছদ্মনাম) বহিষ্কার করা হয়, তখন ভালো করে খেয়াল করিনি, আমি তখন লিখছিলাম। তার একটু পরেই ছামিউলকে (ছদ্মনাম) বহিষ্কার করা হয়। ওই সময় চেয়ারম্যান স্যার জুমের ব্রেকআউট রুমে প্রবেশ করলে ইনভিজিলেটর চেয়ারম্যান স্যারকে জিজ্ঞাসা করে বলেন- স্যার, এই ছেলেও তো লুঙ্গি পরে পরীক্ষা দিচ্ছে। তো একে কি করবো? তখন চেয়ারম্যান স্যার বলেন- একে রিমুভ (জুম থেকে) করে দাও, না করলে এদের শিক্ষা হবে না।
পরে ছামিউলকে জুম থেকে রিমুভ করে দেওয়া হয় এবং পরে শুনলাম বহিষ্কারও করা হয়েছে। আর রিহালের ব্যাপারে জেনেছি পরীক্ষা শেষে। তাকেও নাকি একই কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে’।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই পরীক্ষার একজন সুপারভাইজার ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শিহাবুল আউয়াল বলেন, ‘তারা আমাদের সহযোগিতা করছিল না এবং আমরা যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছিলাম তারা সেটা সেভাবে অনুসরণ করেনি। বরং আমাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল। এরপরও আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা অনুসরণ না করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছি।’
‘লুঙ্গি পরার জন্য তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা’- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লুঙ্গি পরার জন্য বহিষ্কার করা হলে তো আরও অনেককেই বহিষ্কার করতে পারতাম। লুঙ্গি পরার জন্য তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে- এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। তবে আমরা পরীক্ষা শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের শালীন এবং মার্জিত পোশাক পরতে বলি। লুঙ্গির পরিবর্তে আমরা প্যান্ট অথবা ট্রাউজার পরার অনুরোধ করি শিক্ষার্থীদের। তবে লুঙ্গি পরার জন্য ওই তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে- এটা সঠিক নয়’।
তবে যেসব শিক্ষার্থীকে এক বিষয়ে বহিষ্কার হয়েছেন, তারা পরীক্ষা দিতে চাইলে ডিন বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করতে পারেন বলেও জানান অধ্যাপক মো. শিহাবুল আউয়াল।
এ ব্যাপারে জানতে ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ওই পরীক্ষার প্রধান সুপারভাইজার সহযোগী অধ্যাপক ড. এনএইচএম রুবেল মজুমদারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি অনুষদীয় ডিন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
তবে অনলাইন পরীক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী এসব শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা সঠিক হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান জানান, এ রকম একটি ঘটনার কথা শুনেছিলাম। তবে আসল ঘটনা কী সেটি আমি জানি না। বিষয়টি দেখভাল করার জন্য ডীন কে বলেছি। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারির ফলে সৃষ্ট সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে চলতি বছরের ৪ আগস্ট থেকে অনলাইন পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করে হাবিপ্রবি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।