জুমবাংলা ডেস্ক: রাজধানী ঢাকার মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে ছিল। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, চলন্ত এক লেগুনা থেকে কেউ ওই ব্যক্তিকে ফেলে যাচ্ছেন। কিন্তু ফুটেজে সেই লেগুনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট দেখা যাচ্ছিল না। এতে বেকায়দায় পড়ে যায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত সেই লেগুনার খোঁজ পেতে হেলপার সেজে অন্যান্য লেগুনার হেলপারি করতে শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিলাল আল আজাদ।
টানা পাঁচ দিন ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, কোনাবাড়ী, ডেমরা, চিটাগাং রোড আর নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি লেগুনাস্ট্যান্ডে হেলপারি করে তিনি উদ্ঘাটন করেন ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য। শনাক্ত করেন সেই লেগুনা এবং গ্রেপ্তারও করা হয় চারজনকে।
এসআই বিলাল আল আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা-সংলগ্ন ফ্লাইওভারের ওপর ওই ব্যক্তিকে ফেলে যেতে দেখা যায়। ওই ঘটনায় মামলার পর আমি তদন্তের দায়িত্ব পাই। কিন্তু আলামত কিছুই ছিল না আমার কাছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে শুধু দেখতে পাই, লেগুনার পা-দানির রং লাল। সেই সূত্র ধরেই লাল পা-দানির লেগুনা খুঁজতে থাকি। সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করি, ফুটেজে দেখা মডেলের লেগুনা কোন রুটে চলাচল করে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পূর্বপরিচিত লেগুনাস্ট্যান্ডের এক লাইনম্যানের মাধ্যমে সাইনবোর্ডে গিয়ে নিজের পরিচয় গোপন রেখে হেলপারি করা শুরু করি। ২৩ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হেলপারি করে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে পেয়েছি। কখনও কখনও স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাকরি খোঁজার নামে খুঁজতে থাকি সেই লাল রঙের পা-দানির লেগুনাটি। হেলপার সেজে ঘুমিয়ে ছিলাম গাড়ির ভেতরেই। এভাবে অন্তত ৩০০ লেগুনা যাচাই করেছি।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চালানোর আগ্রহের কথা জানাই অন্য চালক সহকর্মীদের কাছে। লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি না, তা খুঁজতে থাকি। শেষপর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা নষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করে চালানো যাবে। কারণ, এর চালক অসুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষপর্যন্ত কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে গিয়ে পাই সেই লাল পা-দানির লেগুনা।
বিলাল আল আজাদ বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম রহস্য উদ্ঘাটনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এরপর সেই লেগুনার মালিককে খুঁজে বের করি। তার কাছে জানতে চাই, এর আগে কে চালিয়েছিল এই লেগুনা। ঠিকানা নিয়ে জানতে পারি, ফরহাদ নামে সেই চালক মাদারীপুর শ্বশুড়বাড়ি রয়েছেন। এরপর ২৪ জানুয়ারি রাতে টিম নিয়ে চলে যাই মাদারীপুর। পেয়েও যাই চালককে। কিন্তু চালক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলতে থাকেন, ২১ জানুয়ারি তিনি লেগুনা জমা দিয়ে চলে এসেছিলেন। প্রযুক্তিগত তদন্তেও তার কথার প্রমাণ মেলে। এতে রহস্য উদ্ঘাটনে হতাশ হয়ে যাই।
পুলিশের এই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, তার সিনিয়র কর্মকর্তা উপকমিশনার (ডিসি), সহকারী কমিশনার (এসি) আর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাকে নানানভাবে দিকনির্দেশনা ও সাহস জুগিয়েছেন। ফের লেগুনার হেলপার সেজে যান কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে। জানতে পারেন ২২ জানুয়ারি রাতে লেগুনাটি নিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক চালক। তার হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান।
যেভাবে রহস্য উদ্ঘাটন হলো:
পুলিশ কর্মকর্তা আজাদ বলেন, দুইজনের নাম জানলেও তাদের কোনো মোবাইল নম্বর বা বাসার ঠিকানা পাচ্ছিলাম না। গ্যারেজ থেকে বলা হয়, ওই দুজন বিভিন্ন স্ট্যান্ডে আর বিভিন্ন গ্যারেজে থাকেন। কিন্তু দু-তিনদিন ধরে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর ফের আমি হেলপার সেজে অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে মঞ্জুর ড্রাইভারকে খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে জানতে পারি, মঞ্জুরের হেলপার রহমান এখন বাসে হেলপারি করেন। শেষপর্যন্ত তাকে আটক করা গেলেও মঞ্জুরকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে আটকের বিষয়টি গোপন রেখে রহমানকে মূলত চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল এবং তার মাধ্যমে মঞ্জুরকে খোঁজা হচ্ছিল। এরপর সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে কাকতালীয়ভাবেই পাওয়া যায় মঞ্জুরকে। তাদের দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় রিপন আর রুবেল নামে আরও দুইজনকে। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে পরিচয় লুকিয়ে তার হেলপারি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর সেই লাশটি ছিল একজন মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ফ্লাইওভারে নিয়ে ওই চারজন তার কাছ থেকে ৫ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর তাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটি রাতের শেষভাগে লোকজনকে লেগুনায় তুলে সবকিছু কেড়ে নেয়। এরপর চোখে মলম বা মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে ফেলে দেয়। মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিন এমন ঘটনারই শিকার হয়েছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।