জুমবাংলা ডেস্ক : লেজার ড্রোনের সাহায্যে দেশের সব গাছ গুনলেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে মোট ১৪২ দশমিক ৬ বিলিয়ন গাছ রয়েছে। এর মানে, প্রতি চীনা নাগরিকের জন্য গড়ে প্রায় ১০০টি করে গাছ রয়েছে। চীনের এই বিপুল গাছের সংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটি অত্যন্ত ঘন জনবসতিপূর্ণ।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের রিমোট সেন্সিং এবং জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং গবেষণার প্রধান লেখক কিংহুয়া গুও বলেন, এই নতুন পরিসংখ্যানটি সম্ভবত গাছের প্রকৃত সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর একটি সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গাছ গণনা করার প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
কিংহুয়া গুও আরও বলেন, প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরও বেশি হতে পারে।
২০১৯ সালে চীনের নবম জাতীয় বন জরিপে প্রতি একরে (১ হাজার ৫২ গাছ/হেক্টর) গড়ে ৪২৬টি গাছ পাওয়া গেছে, যা নতুন গবেষণার প্রতি একরের (৬৮৯ গাছ/হেক্টর) আনুমানিক ২৭৯ গাছ থেকে অনেক বেশি। তবে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সংখ্যা হয়তো এই দুই হিসাব র মধ্যেই কোথাও হতে পারে, তবে তা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
গাছের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বন পরিবেশ এবং গাছের মাধ্যমে কার্বন সংরক্ষণ পরিমাণ নির্ধারণে সাহায্য করবে। এই গবেষণায় চীনের গাছগুলোর বিস্তৃত মানচিত্রও তৈরি করা হয়েছে, যা দেশের পরিবেশগত এবং জলবায়ু সম্পর্কিত লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে।
গবেষণার জন্য গবেষকেরা লেজার-ভিত্তিক ম্যাপিং প্রযুক্তি লাইডার (লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) ব্যবহার করেছেন। ২০১৫ সাল থেকে ড্রোনের মাধ্যমে তারা লাইডার ডেটা সংগ্রহ করছেন, যা এখন ৫৪০ বর্গমাইল (১৪০০ বর্গকিলোমিটার) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
উল্লেখ্য, লাইডার বা লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং হলো একটি লেজার-বেসড প্রযুক্তি যা দূর থেকে বস্তু বা ভূমির অবস্থা নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত মাটির উচ্চতা, গাছপালা, বিল্ডিং, বা অন্যান্য ভৌত কাঠামোর তিন-মাত্রিক (৩ ডি) মানচিত্র তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।
এই গবেষণায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার ‘লাইডার ৩৬০’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে গাছ গণনা করেছে, এবং এই সংখ্যা থেকে তারা একটি জাতীয় পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি, সায়েন্স বুলেটিন জার্নালে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
তবে এই প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন—ঘন বনাঞ্চলে গাছের নিচের স্তরের গাছগুলো সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। গুও বলেছেন, ‘এ ধরনের এলাকায় গাছের ওপরের শাখা গুলো যদি একে অপরের ওপর চলে আসে, তবে গাছের নিচের অংশের গাছ সঠিকভাবে শনাক্ত করা কঠিন হয়, যার ফলে গাছের সংখ্যা কম দেখাতে পারে।’
তবে, এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, এই গবেষণার ফলাফল চীনের গাছের জনসংখ্যা সম্পর্কে পূর্ববর্তী ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
চীন শিগগিরই আরও বেশি গাছ লাগাবে, কারণ দেশটি বর্তমানে গাছের চারা রোপণ করছে ব্যাপক হারে।
গোবি এবং তাকলামাকান মরুভূমি বিস্তার রোধ করার জন্য চীনের উত্তরাঞ্চলে একটি বিশাল গাছের দেয়াল তৈরি করা হচ্ছে। এই গাছের দেয়ালটির নাম ‘গ্রেট গ্রিন ওয়াল’ বা ‘থ্রি-নর্থ শেলটারবেল্ট ফরেস্ট প্রোগ্রাম’। এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন গাছ রোপণ করা হবে। এই দেয়ালটি ইতিমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বীজ রোপণ করা বন, যেখানে ৬৬ মিলিয়ন গাছ রোপণ করা হয়েছে। তবে এটি মরুভূমির বিস্তার রোধে কতটা সফল, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
এই গবেষণায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি শুধু গাছের সংখ্যা গণনা এবং মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করে না।
গুও বলেছেন, ‘উচ্চ-নির্ভুল ডেটা এবং বুদ্ধিমান মডেলগুলোর মিশ্রণ নিশ্চিত করে যে, প্রতিটি গাছ সবচেয়ে উপযুক্ত স্থানে রোপণ করা হচ্ছে।’
একজন ব্যক্তির গড় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন, যা প্রতিবছর প্রায় ৪ দশমিক ৩ টন। এটি পূরণ করতে একজন ব্যক্তির বিপরীতে প্রায় ১৬৫টি গাছ লাগানো প্রয়োজন। তবে দেশ ও অঞ্চল এই সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে।
এদিকে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য গাছের সংখ্যা দেশে দেশে ভিন্ন, কানাডায় সবচেয়ে বেশি এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে কম।
কানাডা: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ৮ হাজার ৯৫৩টি গাছ
বাংলাদেশ: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ৬টি গাছ
রাশিয়া: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ৪ হাজার ৪৬১টি গাছ
যুক্তরাষ্ট্র: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ৭১৬টি গাছ
ভারত: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ২৮টি গাছ
ফ্রান্স: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ১৮২টি গাছ
যুক্তরাজ্য: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ৪৭টি গাছ
অস্ট্রেলিয়া: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ৩ হাজার ২৬৬টি গাছ
ব্রাজিল: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ১ হাজার ৪৯৪টি গাছ
চীন: প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ১০২টি গাছ
নেপাল: প্রতি ব্যক্তির জন্য ১০০ টির বেশি গাছ
শ্রীলঙ্কা: প্রতি ব্যক্তির জন্য ১০০ টির বেশি গাছ
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।