জেমস ওয়েব নভোদুরবিন অবস্থান করছে এল২ ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে। আর সম্প্রতি ভারতীয় নভোযান সূর্য গবেষণার লক্ষ্যে এল১ বিন্দু পানে যাত্রা করেছে। কিন্তু এই ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট কী? সহজ করে বলা যায়, মহাকাশে নিরাপদ পার্কিং স্পট। বড় কোনো বস্তুকে ঘিরে ছোট কোনো বস্তু যখন ঘুরতে থাকে, তখন বড় বস্তুটির দিকে মহাকর্ষীয় টান অনুভব করে।
ধরুন, আপনার মহাকাশযানটি আপনি সূর্য ও পৃথিবীর কোথাও পার্ক করতে চাচ্ছেন। কয়েক বছর ওভাবে থাকলে দেখা যাবে, মহাকাশযানটি কয়েক লাখ মাইল দূরে সরে গেছে। যদি সূর্যের কাছাকাছি কোথাও রাখেন, তাহলে যানটি সূর্যের দিকে এগিয়ে যাবে। আবার পৃথিবীর খুব কাছে রেখে গেলে এটি অনেকটা এগিয়ে আসবে পৃথিবীর দিকে।
কিন্তু পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় এ রকম হয় না। এসব জায়গায় পৃথিবী ও সূর্যের মহাকর্ষ এমনভাবে একে অন্যকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় যে সে জায়গার মহাকর্ষীয় টান থাকে একদম ভারসাম্যপূর্ণ। এগুলোকে বলে ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট আছে পাঁচটি। এগুলোকে যথাক্রমে এল১, এল২, এল৩, এল৪ ও এল৫ ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট বলা হয়।
ধরুন, পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে আপনার মহাকাশযানটি সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে। আমরা একটা গোলীয় স্থানাঙ্ক কাঠামো ব্যবহার করব। এই গোলীয় স্থানাঙ্ক কাঠামোটিকে সহজে বোঝার জন্য একটা সমতল চাদরের মতো কল্পনা করে নিই। পুরো কাঠামোটি পৃথিবীর সমান বেগে ঘুরছে। এভাবে ঘুরলে একটি কেন্দ্রবিমুখী বল কাজ করবে। বোঝার জন্য ধরে নিই, এটা সমতল চাদরটিকে বাইরের দিকে বাঁকিয়ে ফেলবে।
সূর্যের মহাকর্ষ আবার নিজের চারপাশে চাদরটিকে ভেতরের দিকে বাঁকিয়ে ফেলবে, একই কাজ করবে পৃথিবীও। ফলে বর্তমান কাঠামোটি হবে দুটি খাদসহ বাইরের দিকে বাঁকানো একটি চাদরের মতো। এখানে সূর্যের কাছাকাছি যদি মহাকাশযানটি থাকে, তাহলে সূর্যকে ঘিরে থাকা খাদের দিকে ঘুরতে ঘুরতে নেমে যেতে থাকবে।
পৃথিবীর কাছাকাছি থাকলে নেমে যেতে থাকবে পৃথিবীকে ঘিরে থাকা খাদের দিকে। আবার চাদরের বাইরের ঢালু দিকে থাকলে চলে যাবে বাইরের দিকে। যদিও বাস্তবে বিষয়টা ঠিক এরকম নয়। বোঝার সুবিধার্থে গোলক হিসেবে ধরে নিয়ে এভাবে ভাবা যায়।
কিন্তু চাদরের ওপর এমন কিছু সমতল জায়গা আছে, যেখানে মহাকাশযানটি নিরাপদে থাকতে পারবে, কোনো দিকে পড়ে যাবে না। এই পাঁচ বিন্দুই পাঁচটি ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট। এই জায়গাগুলোতে পৃথিবী ও সূর্যের মহাকর্ষ এমনভাবে একে অন্যকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় যে মহাকর্ষীয় টান থাকে একদম ভারসাম্যপূর্ণ।
এর মধ্যে প্রথম তিনটি আবিষ্কার করেন অয়লার, আর শেষ দুটি আবিষ্কার করেন ল্যাগ্রাঞ্জ। প্রথম তিনটি অস্থিতিশীল। মানে ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট থেকে মহাকাশযানটি একটু সরে গেলেই পৃথিবী বা সূর্যের টানে চলে যাবে অনেকটা দূরে। কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম পয়েন্ট দুটি স্থিতিশীল। মানে মহাকাশযানটি একটু সরে গেলেও পৃথিবী বা সূর্যের টানে খুব বেশি সরে যাবে না। জেমস ওয়েব অবস্থান করবে এল২-তে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।