জুমবাংলা ডেস্ক : ময়মনসিংহ জেলায় করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নেই সরকারিভাবে। যে কারণে বেশ বিপাকে পড়েছে জেলার ল্যাব টেকনিশিয়ানরা। অপর দিকে সদর উপজেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহে প্রতিটি ল্যাবেই যেখানে টেকনিশিয়ান থাকার কথা, সেখানে সিটি করপোরেশনসহ ১৫ লাখ লোকের জন্য রয়েছেন মাত্র একজন টেকনিশিয়ান!
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার জনসংখ্যা পৌনে ৭ লাখ এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা সোয়া ৮ লাখ। একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান থাকায় নমুনা সংগ্রহের কাজের গতি শ্লথ হয়েছে। সম্প্রতি আরেকজনকে ডিপুটেশনে দেওয়া হয়েছে।
জেলায় ল্যাব টেকনিশিয়ানদের কমতি থাকলেও তাদের বিপদ নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে। কারণ, সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকায় পকেটের টাকা খরচ করে উচ্চমূল্যে নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনছেন তারা। খোলাবাজারে নমুনা সংগ্রহের পণ্যের দাম যেখানে মাত্র ১০০ টাকা, সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা।
সমরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা নমুনা সংগ্রহে ব্যবহৃত সয়্যবস্টিক খোলা বাজারে প্রতি ১০০টির একটি প্যাকেটের দাম ছিল ১০০ টাকা, সেটি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। জিপলক ব্যাগের দাম হয়েছে ৫০০ টাকা, এমনকি এমপটি স্ক্রও ক্যাপ্ট টিউব কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৫০০ টাকায়।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেলেও এসব অসুবিধার কারণে রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কাজ হচ্ছে মন্থর গতিতে। বিশাল এলাকা হওয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হিমসীম খাচ্ছেন টেকনিশিয়ানরা।
ল্যাবে কর্তৃপক্ষের দাবি, আরও অন্তত পাঁচজন ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে। প্রয়োজন কমপক্ষে চারটি নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করার।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন খান সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় বি.এম.এ করোনা মনিটরিং সেল ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি ও সাবেক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া।
তবে সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নেই, কথাটি অস্বীকার করেন ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম। তিনি বলেন, ‘পর্যপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে সরবরাহ সামগ্রীর সংকট দেখা দিলে বরাদ্দের টাকা হতে খোলা বাজার থেকে সামগ্রী ক্রয় করে নেবেন।’
যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছেন, সিভিল সার্জন অফিস থেকে এক টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বাৎসরিক এমএসআর খাতে কিছু টাকা ছিল, সিভিল সার্জন তা থেকে খরচ করার মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ময়মনসিংহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ পর্যন্ত প্রায় লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে।
জানতে চাইলে নমুনা সংগ্রহ সামগ্রীর সংকট এবং নিজস্ব টাকায় সামগ্রী ক্রয় সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহজাহান কবীর। এমনকি এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই বলেও জানান তিনি।
গত ১ মার্চ তারিখের এক প্রজ্ঞাপণে একটি করোনা মোকাবিলায় ময়মনসিংহ জেলা কমিটি গঠন করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, ‘জেলা কমিটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রয়োজনে কোয়ারেন্টিনসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ জাতীয় কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করবে।’
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘খোঁজ নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।