প্রায় সব ধরনের শক্তিকেই মানুষ পরিণত করে যান্ত্রিক শক্তিতে। এটাই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি। রেলপথে ট্রেন চালায়, আকাশে বিমান তোলে, শার্ট সেলাই করে, মোটর গাড়ি আর খনন যন্ত্র প্রস্তুত করে। আমাদের হৃদয়ের যান্ত্রিক শক্তি শিয়ার শিরায় রক্ত পরিচালিত করে, আর মাংসপেশির শক্তি আমাদের চলার, লেখার ও কাজ করার সুযোগ দেয়।
তা ভালো কথা। কুঁদযন্ত্রে আমরা কোনোকিছু পালিশ করলাম কিংবা মেশিনে একটি শার্ট সেলাই করে নিলাম। কিন্তু যে শক্তি আমাদের এ কাজে সাহায্য করল, তা গেল কোথায়? কীসে পরিণত হলো? কোনো যন্ত্রাংশে, শার্টে বা আর কিছুতে? না, এগুলোর কোনোটাতেই পরিণত হয়নি।
আমরা শক্তি দিয়ে যা-ই করি না কেন, শক্তি সর্বদা শক্তিই থেকে যায়। তার বিলুপ্তিও নেই, সৃষ্টিও নেই। তা কেবল রূপ পরিবর্তন করে। মানুষের সেবা করার পর—যেমন ইস্পাত গলানো, মাল পরিবহন বা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রদর্শনের পর—তা অবশ্যই রূপান্তরিত হয় তাপে, তাপ শক্তিতে।
এই তো দেখো না, একখানি ডিজেল ইঞ্জিন ছুটছে। তার পেছনে অনেকগুলো ওয়াগনের বিরাট একটি লেজ…প্রতিকুল বাতাস ইঞ্জিনের কপালে আঘাত করছে। যা পাচ্ছে, তা-ই আঁকড়ে ধরছে—ওয়াগনগুলোর দেয়ালে ও ছাদে ঘষে যাচ্ছে। ট্রেনকে চলতে বাধা দিচ্ছে। ওয়াগনগুলোর তলায় রেলের ওপর চাকার কট-কট ঘট-ঘট শব্দ হচ্ছে এবং তা-ও রেলে ঘষা খাচ্ছে। এই ঘর্ষণেই চলে যাচ্ছে ইঞ্জিনের প্রায় সব শক্তি।
আর ঘর্ষণের ফলে যেকোনো জিনিসই গরম হয়। তা যাচাই করা খুব সহজ। নিজের হাতের তালু দুটি একটু ঘষে দেখো, সঙ্গে সঙ্গেই টের পাবে তা গরম হয়ে উঠছে। এর মানে কি ডিজেল ইঞ্জিন তার কাজ দিয়ে রেল ও বাতাস গরম করে? ঠিক তা-ই। পরে এই তাপ চলে যায় বায়ুমণ্ডলে এবং তারপরে আরও দূরে—মহাকাশে। একই ব্যাপার ঘটে মোটর গাড়ির ক্ষেত্রে। দূর পথ পাড়ি দেওয়ার পর তার চাকাগুলো একবার ছুঁয়ে দেখো না। জানো, কী গরম লাগবে! তাহলে এ থেকে কী দাঁড়াচ্ছে? পৃথিবী গরম করছে মহাশূন্যকে? অবশ্যই।
তবে মহাকাশ যে কেবল পৃথিবীর কাছ থেকে শক্তি নেয়, তা নয়। তা আমাদের কাছে নিজস্ব শক্তিও পাঠায়—সেটা হলো সৌরশক্তি। ওই শক্তি সঞ্চিত হয় উদ্ভিদে এবং পরিণত হয় রসায়নিক শক্তিতে। আগে হোক পরে হোক গাছপালা একদিন মরে যায়, আর তাদের ধ্বংসাবশেষ রূপান্তরিত হয় তেল, গ্যাস, পাথুরে কয়লা ও পীটে। আজ পৃথিবীতে জ্বালানি হচ্ছে শক্তির প্রধান উৎস। ঠিক করে বললে, আপাতত প্রধান উৎস।
তা জ্বালিয়ে লোকে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব শক্তি প্রস্তুত করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বয়লারে, মোটর গাড়ি, জাহাজ আর বিমানের ইঞ্জিনে, লোহা গালাইয়ের ব্লাস্ট ফার্নেসে এবং রকেটে প্রতি বছর যে পরিমাণ জ্বালানি জ্বলে, তার তাপ দিয়ে অনায়াসে ফুটানো যাবে কৃষ্ণ সাগরের সব পানি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।