শবেবরাতের ফজিলত:
ইসলামী পরিভাষায় শবেবরাত অর্থ বরাতের রাত বা মুক্তির রাত। আরবি ভাষায় একে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” বলা হয়, অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যরাত। এটি ১৪ শাবান দিবাগত রাত। এই রাতকে বলা হয় রহমতের রাত, বরকতের রাত, গুনাহ মাফের রাত।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, এই রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। অসংখ্য বান্দাকে গুনাহ থেকে মুক্তি দেন এবং রিজিক, হায়াত, মরণ নির্ধারণ করা হয়। এই রাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ব্যাপক গুরুত্ব ও উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়।
শবেবরাতের ফজিলতের হাদিস:
১. রাসুল (সা.) বলেছেন:
“আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি (বিশেষভাবে) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)
২. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন:
“তুমি কি জানো, এই রাতে কী হয়? এ রাতে এক বছরের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ও মৃত্যুবরণকারী এবং প্রত্যেক ব্যক্তির আমল ওঠানো হয়। আর এ রাতে মানুষের রিজিক নির্ধারণ করা হয়।” (বায়হাকি: ৬২১৫)
শবেবরাতের করণীয় আমল:
১. ইবাদত-বন্দেগি:
এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। যেকোনো ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তিগফার আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম উপায়।
২. কুরআন তিলাওয়াত:
শবেবরাতের রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা খুব ফজিলতপূর্ণ। কুরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম, এই রাতে বেশি বেশি কুরআন পড়া মুমিনের জন্য বরকত ও রহমত বয়ে আনে।
৩. দোয়া ও ইস্তিগফার:
এই রাতে আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, নিজের জন্য, পরিবার ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা। রাসুল (সা.) এই রাতে দীর্ঘ সময় সেজদায় থাকতেন এবং কাঁদতেন।
৪. কবর জিয়ারত:
শবেবরাতের রাতে রাসুল (সা.) কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করেছেন বলে হাদিসে বর্ণিত আছে। এই রাতে কবর জিয়ারত করে মৃতদের জন্য দোয়া করা মুস্তাহাব।
৫. রোজা রাখা:
১৫ শাবান অর্থাৎ শবেবরাতের পরদিন রোজা রাখা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণ রোজা রাখতেন। (বুখারি: ১৯৭০)
যেসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত:
১. শবেবরাত উপলক্ষে আতশবাজি, পটকা ফোটানো, হৈ-হুল্লোড় করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়।
২. বিদআতি কাজকর্ম যেমন- নির্দিষ্ট রাকাত নামাজ, নির্দিষ্ট দোয়া বাধ্যতামূলক মনে করে পড়া, এগুলো হাদিসসম্মত নয়।
৩. এই রাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটি কিংবা বিশেষ খানা খাওয়ার বিষয়েও ইসলাম নিরুৎসাহিত করে।
উপসংহার:
শবেবরাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এই রাতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। গুনাহ মাফের জন্য এ রাত বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। তাই আমাদের উচিত এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন হয়ে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের চেষ্টা করা।
সুতরাং, শবেবরাতের রাতটি কাটুক ইবাদত-বন্দেগি, তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া-মুনাজাতে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই রাতের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।