ধর্ম ডেস্ক : আজ রবিবার মুসলিম উম্মাহ’র পবিত্র শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত। বিশ্ব মুসলিমবাসীর বিশ্বাস, এ রাতে অসংখ্য বান্দা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও আশীর্বাদ লাভ করে থাকে। এ কারণে এ রজনীকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘নিষ্কৃতি/মুক্তির রজনী’ বলা হয়।
শবে বরাত কী: শবে বরাত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো ‘বরাতের রাত’ বা মুক্তির রাত। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এই রাতকে বলা হয় ‘লাইলাতুল বরাত’। এটি মুসলিমদের কাছে পাপমুক্তি, গুনাহ মাফ, রহমত ও বরকতের রাত।
শবে বরাতের ইতিহাস: শবে বরাত সম্পর্কে কুরআনে সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই। তবে হাদিস শরীফে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বনু কালব গোত্রের মেষের পশমের চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষের গুনাহ মাফ করে দেন।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম: ১. শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো নামাজ নেই। তবে নফল নামাজ পড়া উত্তম। ২. সাধারণত দুই রাকাত করে যত খুশি পড়া যায়। ৩. প্রত্যেক দুই রাকাতে একবার সালাম ফিরিয়ে নিতে হয়। ৪. প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়া যেতে পারে। ৫. দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য কোনো ছোট সূরা পড়া যেতে পারে। ৬. ইবাদতের উদ্দেশ্যে রাতে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যেতে পারে। ৭. কবরস্থানে গিয়ে মুমিন মুসলমানদের জন্য দোয়া করা যায়।
নিয়ত: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতাইনি নাফলান, মুখলিসান লিল্লাহি তাআলা।” অর্থ: “আমি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করছি।”
শবে বরাতের করণীয় আমল: ১. ইবাদত-বন্দেগিতে রাত অতিবাহিত করা। ২. নফল নামাজ আদায় করা। ৩. বেশি বেশি তাওবা, ইস্তিগফার ও দরুদ শরীফ পড়া। ৪. আল্লাহর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। ৫. কুরআন তেলাওয়াত করা। ৬. মৃত আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করা। ৭. গরিব-অসহায়দের সাহায্য করা।
শবে বরাতের বর্জনীয় কাজ: ১. আতশবাজি ফোটানো, হৈচৈ করা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। ২. অপচয় বা অপব্যয় করা। ৩. বিদআত বা ধর্মে নতুন কিছু যোগ করা। ৪. শুধুমাত্র এক রাতে ইবাদত করাকে ফরজ বা আবশ্যক মনে করা। ৫. ফজরের নামাজ বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা।
গুরুত্বপূর্ণ দোয়া: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’আফু আন্নি।” অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করে দাও।
উপকারিতা: ১. গুনাহ মাফ হয়। ২. আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ হয়। ৩. আত্মশুদ্ধি ঘটে। ৪. অন্তরে প্রশান্তি আসে।
শবে বরাতের নামাজ এবং নিয়ম কানুন
প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের নামাজ বলে আলাদা কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগি করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন।
সন্ধ্যায়- এই রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দুই রাকাত করে মোট ৬ রাকাত নফল নামায পড়া উত্তম। এই ৬ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে। দু’রাকাত নামাজ শেষ করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা এখলাছ ২১ বার তিলাওয়াত করতে হবে।
শবে বরাতের নফল নামাজ
দুই রাকাত তহিয়াতুল অজুর নামাজ, নিয়ম- প্রতি রাকাতে আল হামদুলিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ (সূরা এখলাছ)। ফজিলত: প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে।
দুই রাকাত নফল নামাজ, নিয়ম- ১ নম্বর নামাজের মত, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফজিলত: রুজিতে বরকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বকশিস পাওয়া যাবে।
আট রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফজিলত: গুনাহ থেকে পাক হবে, দু’আ কবুল হবে এবং বেশি বেশি নেকী পাওয়া যাবে।
১২ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে, ১০ বার কালেমা তওহীদ, ১০ বার কলেমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ।
১৪ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফজিলত: যে কোনো দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।
চার রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফজিলত: গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
আট রাকাত নফল নামাজ এক সালামে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফজিলত: এর ফজিলতে সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, হযরতে সৈয়্যদাতুনা ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা এরশাদ করেছেন, ‘আমি ওই নামাজ আদায় কারীর সাফায়াত করা ব্যতীত জান্নাতে কদম রাখব না।
রোজার ফজিলত হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে শাবানে ১ দিন রোজা রেখেছে, তাকে আমার সাফায়াত হবে। আরো একটি হাদিস শরীফে আছে যে, হুজুর সালল্লাহু তালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ছোঁবে না। এছাড়াও পড়তে পারেন ‘সালাতুল তাসবীহ এর নামাজ। এই নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুকে এই নামায শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এই নামাজ পড়লে আল্লাহ আয-যাওযাল আপনার আউয়াল আখেরের সগীরা কবীরা জানা অজানা সকল গুণাহ মাফ করে দেবেন।
‘হে চাচা জান! আপনি যদি পারেন, তবে দৈনিক একবার করে এই নামাজ পড়বেন। যদি দৈনিক না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার পড়বেন। যদি সপ্তাহে না পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে না পারেন, তবে বছরে একবার পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামাজ পড়বেন (তবুও ছাড়বেন না।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
বাংলায় নিয়ত করলে এই ভাবে করতে পারেন: ‘শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর’।
সতর্কতা
মনে রাখতে হবে ফরজ নফলের চেয়ে অনেক বড় শবে বরাতের নামাজ। যেহেতু নফল সেহেতু নফল পড়তে পড়তে ফরজ পড়া ভুলে গেলে বা ঘুমের কারণে পড়তে না পারলে কিন্তু সবই শেষ। অর্থাৎ নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না। সাবধান এ যেন না হয়। ভাল হয় শবে বরাতের নফল শেষ করে বেতের নামাজ পড়ে এর পর ফজর পড়া। যাই করেন নামাজ পড়েন আর ঘুমান সমস্যা নেই, ঠিক সময় মত উঠে ফজর নামাজ যেন পড়তে পারেন সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
তথ্য সূত্র: বিডি জার্নাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।