শহুরে জীবনে নিস্তব্ধতা খুঁজে পাওয়া ভার। সারাক্ষণই শব্দ হচ্ছে সবখানে। গাড়ির হর্ণ, লাউডস্পিকারের আওয়াজ, মানুষের কথাবার্তা, যানবাহন চলার শব্দ—আক্ষরিক অর্থেই শব্দের সমুদ্রে ডুবে আছি আমরা। তারপরেও শোনা, অর্থাৎ তথ্যের আদান-প্রদান ছাড়া শব্দের তেমন একটা ব্যবহার দেখা যায় না। শৈশবে বিজ্ঞান বইয়ে সবাই পড়েছি, শব্দ একধরনের শক্তি। কখনো কি মনে হয়েছে, শব্দকে তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করি না কেন? তারচেয়েও বড় কথা, শব্দ কি আসলেই ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব। কিন্তু কীভাবে তা করা হয়, সে উত্তরে যাওয়ার আগে শব্দ সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া দরকার। সহজ কথায় শব্দ হলো বিশেষ ধরনের কম্পনের ফল। কম্পন কঠিন, তরল বা বাতাসের অণুতে হতে পারে। এই কম্পন আড় তরঙ্গ বা একই প্যাটার্নের কোনো একদিকে চললে তাকে শব্দ বলা হয়। শব্দের কম্পাংক ১০-২০ হাজার হার্জের মধ্যে থাকলে মানুষ তা শুনতে পায়।
শব্দ তরঙ্গ চলার পথে যত ধরনের অণু সামনে পড়ে, সবগুলোই তার নির্দিষ্ট প্যাটার্নে কাঁপতে থাকে। এক অণু অন্য অণুর মধ্যে কোন প্যাটার্নে কাঁপতে হবে, তা জানিয়ে দেয় ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে। প্রতিবার ধাক্কায় একটু একটু করে শক্তি কমে। তাই শব্দের উৎস থেকে যত দূরে যাওয়া যায়, শব্দের তীব্রতা তত কমে।
শব্দ তৈরিতে দরকার শক্তি। তাই স্বাভাবিকভাবেই শব্দ থেকে শক্তি বা বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে শব্দে থাকা শক্তির পরিমাণ খুব সামান্য। কারণ, শব্দ তৈরিতে খুব সামান্য শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে চারপাশের শব্দের সবটুকু শক্তি সংগ্রহ করা যায় না। প্রচণ্ড উচ্চ শব্দ ক্রমাগত বাজতে থাকলে সেখান থেকে কাজে লাগানোর মতো শক্তি কিছুটা পাওয়া যায়। যেমন ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে যে পরিমাণ শব্দ হয়, তাতে প্রতি বর্গমিটার পৃষ্ঠতল থেকে মাত্র শখানেক ওয়াট পাওয়া যায়।
অন্যদিকে পৃথিবীতে যে পরিমাণ সূর্যের আলো পড়ে, তা ব্যবহার করে প্রতি বর্গমিটার পৃষ্ঠতল থেকে প্রায় ৬৮০ ওয়াট শক্তি পাওয়া যায়। তাই শব্দ থেকে শক্তি তৈরি না করে সূর্যের আলো, বাতাস, পানির স্রোত বা তেল গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকেই শক্তি সংগ্রহ করা হয়।
তবে গবেষকেরা এখানেই থেমে নেই। তাঁরা পরিবেশের শব্দ কম্পন থেকে শক্তি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। শব্দের কম্পন কাজে লাগিয়ে চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে পরিবাহী তার-কুণ্ডলী নড়াচড়া করানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করা যায়। কনসার্ট বা খেলার স্টেডিয়ামে যে উচ্চ শব্দ তৈরি হয়, তার কম্পন কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে শক্তি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এভাবে সংগ্রহ করা শক্তির পরিমাণ সামান্য হওয়ায় তা দিয়ে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। বড়জোর ডিভাইস চার্জ বা আলোর ব্যবস্থা করা যায়।
মোট কথা, শব্দ থেকে শক্তি সংগ্রহ পরিবেশের জন্য উপকারী হলেও পরিমাণ সামান্য হওয়ায় এটা নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করা হয় না। বরং শক্তি সংগ্রহের জন্য সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ বা জলবিদ্যুৎ কাজে লাগানো হয়। তাই সম্ভব হলেও বিদ্যুৎ সংগ্রহের জন্য শব্দ তেমন ব্যবহৃত হয় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।