ডা. চৌধুরী সাইফুল আলম বেগ : শারীরিক অসুস্থতা বা শারীরিক দুর্বলতা যে কতটা অস্বস্থিকর সেটা শুধু সেই ব্যক্তি অনুভব করতে পারেন, যিনি বর্তমানে এ সমস্যায় ভুগছেন। অনেকেই রয়েছেন শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন কিন্তু জানেন না যে তার কী হয়েছে।
* শরীর দুর্বল কেন হয়
বিভিন্ন কারণে শরীর দূর্বল হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- পানিশূন্যতা, পুষ্টির অভাব, অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল, অনিয়মিত ব্যায়াম, ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি, সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি, শ্বাসনালি অথবা মূত্রনালির সংক্রমণ, শরীরের ভিতর দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগের বসবাস (যেমন-থাইরয়েডের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, স্টোক, অনিয়মিত জ্বর) ইত্যাদি।
* কী কী সমস্যা হয়
একেক শরীরে একেক রকমের উপসর্গ দেখা দেয়। মূলত অসুস্থতার ধরনের ওপর ভিত্তি করে শারীরিক দুর্বলতাগুলো প্রকাশ পায়। শরীর দুর্বল হলে মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কোনো কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে না, একটুতেই হাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, অতিরিক্ত গরম লাগে কিংবা অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগে যেটা আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, পেট ব্যথা করে, হজমশক্তি কমে যায়, মাথা ঘুরায়, ওজন অতিরিক্ত কমে যায়, রাতে ভালো ঘুম হয় না, পাকস্থলী, কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায়, অতিরিক্ত পানি পিপাসা পায়, হাড়ে ব্যথা অনুভব হয়, হাত পা কামড়ায় অর্থাৎ হাত পায়ে অস্বস্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি হয়, অতিরিক্ত চিন্তা গ্রাস করে ফেলে, অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়, চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, মুখে অধিক পরিমাণে পিম্পলের আবির্ভাব ঘটে, চুলকানি জাতীয় রোগগুলো হয়ে থাকে, বিশেষ করে অ্যালার্জি, অল্পতেই সর্দি কাশি লেগে যায় এবং যে কোনো কাজে একঘেয়েমি ভাব চলে আসে কোনো কিছুতেই মন বসে না অর্থাৎ মনোযোগ ক্ষমতা কমে যায়।
* শরীর দুর্বল হলে করণীয়
হঠাৎ করে যদি শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে যে কাজগুলো করতে হবে-
▶ সঙ্গে সঙ্গে এক গ্লাস পানি পান করতে হবে, এক গ্লাস গরম দুধ খেতে হবে
▶ কিছুটা রেস্ট নিতে হবে। এর জন্য আধা ঘণ্টা বা কুড়ি মিনিট শুয়ে থাকতে পারেন বা কিছু সময়ের জন্য ভাতঘুম দিতে পারেন।
শরীর যদি দীর্ঘ সময় ধরে দুর্বল থাকে সে ক্ষেত্রে করণীয় কাজ হবে-
▶ নিয়মিত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
▶ প্রতিদিন সকাল এবং রাতে হালকা হলেও ব্যায়াম করা।
▶ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
▶ রাতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা।
▶ শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া।
▶ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং তাদের নির্দেশনাবলি মেনে চলা।
▶ সেই সঙ্গে মনকে প্রফুল্ল রাখা এবং হাসিখুশি থাকাও শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর অন্যতম পন্থা হিসাবে কাজ করে।
* কী খেতে হয়
সেইসব খাবার খাওয়া জরুরি যে খাবারগুলো শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জোগাবে। কেননা শরীর দুর্বল হলে সঠিক পুষ্টি ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। শরীর দুর্বল হলে খাবারের পরিমাণ, গুণমান এবং পুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি হয়ে পড়ে। নিুলিখিত কিছু খাবার শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত কাটাতে সাহায্য করে। যথা-
▶ প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া : উদাহরণস্বরূপ মাংস, মাছ, ডাল, দুধ এবং ডেয়ারি প্রোডাক্টস। কেননা প্রোটিন খাদ্য মাংশপেশি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং শরীরের স্থায়িত্ব শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
▶ সবুজ শাক সবজি এবং ফল : লাউ, স্পিনাচ, কালার্ড গ্রিন, ব্রুকলি, ক্যারাট, পটল, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি। এ খাবারে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে, যা শরীরের সম্প্রসারণ এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
▶ কার্বোহাইড্রেট : কার্বোহাইড্রেট খাবার যেমন আটা, ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া, ওটমিল, পাস্তা ইত্যাদি খেতে হবে। কারণ কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি প্রদান করতে সাহায্য করে।
▶ ফ্যাট : খাবারে ফ্যাট বা চর্বি থাকতে হবে। যেমন- অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল, অভকাডো, নাটস, শসা তেল থাকতে হবে। এ তেলে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ডি, যা পুষ্টি সম্প্রসারণ এবং শরীরের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক।
▶ শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ভিটামিন সি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল বা খাবারগুলো বেশি পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন- আঙ্গুর ফল, কমলালেবু, কাঁচামরিচ, লেটুস পাতা, লেবু প্রভৃতি।
* কী ওষুধ খেতে হবে
ওষুধ খাওয়ার আগে যদি উপরোল্লেখিত টিপসগুলো অনুসরণ করেন তাহলে শারীরিক দুর্বলতা কেটে যাবে। তবু ওষুধ হিসাবে কিছু খেতে চাইলে শারীরিক দুর্বলতার কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যদি আপনার শরীরে কোনো রোগ বাসা বেঁধে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রায় ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ খেতে হবে। আর যদি শুধু শারীরিক দুর্বলতা থেকে থাকে তাহলে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এসব পুষ্টির চাহিদা পূরণে তেমন ধরনের ওষুধই নির্বাচন করতে হবে। আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে কোনো ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তাদের নির্দেশিত ওষুধ সঠিক মাত্রায় নিয়ম মেনে খাওয়া ভাল।
* মুক্তির উপায়
শরীর দুর্বল থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাওয়া, প্রতিদিন সঠিক মাত্রায় সঠিক পদ্ধতিতে শরীরচর্চা করা এবং মনকে সবসময় প্রফুল্ল রাখা। শরীর এবং মন একে অপরের পরিপূরক। তাই আপনি যদি শরীরকে ভালো রাখতে চান তাহলে অবশ্যই মনকেও ভালো রাখতে হবে এবং মনের দিক থেকে আপনাকে অনেক বেশি স্ট্রং হতে হবে। এতটুকু শরীর খারাপ যদি কাউকে অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করেন এবং আপনার মন খারাপ হয় সে ক্ষেত্রে শারীরিক দুর্বলতা আরও বেশি গ্রাস করে ফেলবে।
লেখক : ডা. চৌধুরী সাইফুল আলম বেগ, মেডিকেল এডুকেটর ও জিপি এক্সামিনার, সিনিয়র জিপি, ওয়াল্টার্স রোড মেডিকেল সেন্টার, অস্ট্রেলিয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।