জুমবাংলা ডেস্ক : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা, যশোর, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কোপোলামিন ব্যবহার করে প্রতারণা বা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে ৭ জুলাই প্রকাশিত জামিউল আহসান সিপু’র করা একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের এপ্রিলে যশোরের অভয়নগরে একটি ফার্মেসিতে ‘স্কোপোলামিন’ কেমিকেল ব্যবহার করে দোকান থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে যায় একটি চক্র। পরে পুলিশ ঐ দোকানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে তদন্তে নামে। পুলিশ দেখতে পায়, দুই জন্য ইরানি নাগরিক ঐ দোকানে এসে বিক্রেতার কাছে একটা ওষুধ চায়। বিক্রেতা ওষুধটি নেওয়ার জন্য উলটোদিক হয়ে র্যাকের দিকে খুঁজতে থাকে। এ সময় ঐ দুই ইরানি নাগরিক দোকানের সামনের টেবিলের কাচে কিছু একটা পাউডার ছিটিয়ে দেয়। টেবিলের পাশে টাকার নোট ফেলে দেয়। এরপর বিক্রেতা ওষুধটি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় একজন ইরানি নাগরিক ফেলে দেওয়া টাকার দিকে ইশারা দেয়। তখন বিক্রেতা টাকা নিচু হয়ে উঠিয়ে নেয়। এ সময় টেবিলের কাচের ওপর তার মুখ স্পর্শ পায়। মিনিটখানেক পর বিক্রেতা ক্যাশবাক্স খুলে টাকার বান্ডিল এবং খুচরা টাকা ঐ দুই ইরানি নাগরিকের হাতে তুলে দেয়।
এই ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করে পুলিশ ঢাকা ও যশোর থেকে তিন ইরানিসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে—তারা স্কোপোলামিন নামের কেমিকেল ব্যবহার করে প্রতারণা, চুরি ও ডাকাতি করে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ গত বছরের আগস্টে একই ধরনের ঘটনার পর বগুড়ার শিবগঞ্জে আরো দুই ইরানিকে আটক করে।
প্রত্যেক ভুক্তভোগীর দাবি, প্রতারক চক্রের সদস্যরা টাকা, রুমাল, কাপড়, মোবাইল বা ভিজিটিং কার্ড বা অন্য কিছুর মাধ্যমে তাদের নাকের কাছে এই কেমিক্যালটি পৌঁছায়, যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে চলে যাওয়ার পরই ব্রেনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তারা। তখন প্রতারক চক্র যা নির্দেশ দেয়, সেই অনুযায়ী তারা কাজ করে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রতারক চক্রের সদস্যরা এই কাজে যে কেমিক্যালটি ব্যবহার করছে তার নাম ‘স্কোপোলামিন’, যা ডেভিল ব্রেথ বা শয়তানের নিঃশ্বাস নামেও পরিচিত। ল্যাটিনের দেশ কলম্বিয়ায় স্কোপোলামিনকে ‘ডেবিল ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ নামেই অভিহিত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে সত্য কথা বের করতে এটি ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের গোয়েন্দা সংস্থা গোপন তথ্য বের করতে আসামিদের ওপর স্কোপোলামিন ব্যবহার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, স্কোপোলামিনের ব্যবহার বহু আগে থেকেই। এটি মূলত তৈরি হয় ধুতুরা ফুল থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এটির ব্যবহার সব চেয়ে বেশি হয়। স্কোপোলামিন কানের পাশে পুশ করা হলে মানুষের অতীতের অনেক স্মৃতি ভুলে যায়। হাসপাতালে স্কোপোলামিন বা কৃত্রিমভাবে তৈরি ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ। যা অপারেশন-পরবর্তী বমি বমি ভাব এবং বমির চিকিত্সার জন্য ওষুধ হিসেবে ব্যবহত হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, স্কোপোলামিন ব্যবহার করে বেশকিছু প্রতারণার ঘটনা তাদের নজরে এসেছে। এখন পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে স্কোপোলামিন উদ্ধার হয়নি।
এই বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেন, এমন কিছু ঘটনার তথ্য আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই ধরনের ড্রাগ এখনো উদ্ধার হয়নি। তবে এই অপরাধীদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।