এম আর মহসিন, সৈয়দপুর (নীলফামারী): ইচ্ছা আর উদ্যম থাকলে একজন ব্যক্তিই যে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারেন, তাই দেখিয়ে দিয়েছেন সৈয়দপুরের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য শহীদুল ইসলাম। তিনি কৌশলগত দিক প্রয়োগের মাধ্যমে বছরে একটি দেশি মুরগি থেকে ১৮০টি ডিম পাওয়ার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকার উদ্যোক্তারাও দেশি মুরগি পালনে এগিয়ে আসছেন।
সৈয়দপুর শহরের কুন্দল ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা মোঃ শহিদুল ইসলাম। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর বিভিন্ন ব্যবসা করে সফলতা পাননি। অবশেষে হতাশাগ্রস্থ হয়ে ছুটে যান সৈয়দপুর প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পরামর্শে নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে শুরু করেন দেশি মুরগির খামার।
২০১৬ সালে বাড়ির পাশে প্রতিবেশির ১৪ শতক পতিত জমি ভাড়ায় নিয়ে সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করে লিটার ব্যবস্থাপনায় শুরু করেন দেশি মুরগির অধঃমুক্ত পদ্ধতিতে মাংস ও ডিম উৎপাদন। প্রাথমিক পুঁজি হিসেবে বাড়ির ৩৫টি দেশি মুরগি তার খামারে প্রবেশ করান। এরপর প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে কচুরিপানা, ধান ও অন্যের বাড়ির খাবারের উচ্ছিষ্ট নিয়মিত সরবরাহ করেন। এভাবে ৫ মাস বয়সি প্রতিটি মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি শুরু হয় ডিম দেয়া।
মাত্র তিন হাজার টাকা বিনিয়োগের খামারটিতে এখন ২৫০টি মুরগি রয়েছে শহীদুলের খামারে। আছে এক মোরগের সংসারের ৫টি মোরগ। বাকি সব ডিম দেয়া ও মাংসের জন্য। এর মধ্যে নিয়মিত ৩৫ থেকে ৪০ টি মুরগি ডিম দিচ্ছে। এভাবে টানা বছর জুরে চলে ডিম দেয়া। আর এ ডিম ও মাংস উৎপাদনকারী মুরগি বিক্রি করে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার। এতে পাঁচ সদস্যের সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের পর এখন স্বচ্ছলতা ফিরেছে। সন্তানদের পড়ালেখা ও অন্যান্য ব্যয় মেটাচ্ছেন এ খামারের আয় থেকে।
মঙ্গলবার সরজমিন খামারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে খামার সুরক্ষার জন্য কৃত্রিম কোনও ব্যবস্থাপনা নেই। মেঝেতে এক ইঞ্চি পুরু (কাঠের গুড়া) লিটার বিছানো। সেখানে ছিটানো খাবার খাচ্ছে মুরগি।
শহিদুল ইসলাম জুমবাংলাকে জানান, ‘দাম বেশি হলেও দেশি মুরগির চাহিদা বেশি। প্রতিপালনে ঝুঁকি কম থাকায় এ পদ্ধতিতে দেশি মুরগি বেছে নেয়া হয়। তীব্র শীত কিংবা গ্রীস্মকাল কোনও ঋতুতেই সমস্যা হয় না। কিছু রোগ প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন সময় অনুযায়ী দিতে হয়। এতে ব্যয় কম। মাংসের জন্য ওজন বাড়াতে প্রাকৃতিক খাদ্য বিশেষ ভুমিকা রাখছে। ডিম উৎপাদন বাড়াতেও কোন কৃত্রিম খাদ্য দেয়া হয় না দেশি মুরগিকে।
খামারের একটি মুরগি বছরে ১৮০ থেকে ১৯০টি ডিম দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
খামারটি পরিদর্শন ও পরামর্শ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ছুটে আসছেন আগ্রহী উদ্যোক্তারা। সৈয়দপুরের শামিম, লায়লা, রেখা, মালা, মামুন ও নীলফামারীর চম্পা এবং আনিস শহিদুলের পরামর্শ নিয়ে তারাও দেশি মুরগির খামার গড়েছেন।
সৈয়দপুর প্রাণী সম্পদ কার্যালয় জানায়, দেশি মুরগিরর এই খামারে নিয়মিত টিকা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এ খামারটির বিশেষত্ব হলো একটি মুরগি বাচ্চা ফুটানোর পর একদিনেই বাচ্চা পৃথক করে ৩ থেকে ৫ দিনে কুচে ভাব সারানো হয়। সাধারনতঃ দেশি মুরগি বছরে ৩ থেকে ৪ বার ডিম দেয়। তবে এখানে একটি মুরগি বিশেষ কৌশলে বছরে ১০ থেকে ১২ বার বা ১৮০ থেকে ১৯০টি ডিম দিচ্ছে। এতে দেশি মুরগির খামারি লাভবান হচ্ছেন।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রাশেদুল হক জানান, স্বাবলম্বী হতে এটি একটি মডেল খামার। আর্থিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলি এগিয়ে আসলে আরও সমৃদ্ধ হবে এই খাত এবং দেশে নির্ভেজাল আমিষের চাহিদা পুরণে বিশেষ অবদান রাখবে। পাশাপাশি অনেক বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।