জুমবাংলা ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসসহ অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ঐ দিন ঘর থেকে বের হওয়ার আগে, মাকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে রেখে যান আনাস।
রবিবার (২৫ মে) মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়ার শুনানিতে শহীদ আনাসের সেই চিঠি পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
হৃদয়স্পর্শী সে চিঠিতে আনাস লেখেন…..
‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয় সে-ই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।’
এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কিছুক্ষণের জন্য পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। পরে শুনানি শেষে ট্র্যাইব্যুনাল এ মামলায় (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে আদেশ দেন এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ জুন দিন ধার্য করেন।
এদিকে, চাঁনখারপুলের ওই গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়। এরপর গত ২১ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)।
মামলার আসামিরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
আট আসামির মধ্যে চারজন এখন কারাগারে, অন্যরা পলাতক। গ্রেপ্তাররা হলেন ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।