
পছন্দের ‘শাপলা’ প্রতীক না পাওয়ায় এবার রাজনৈতিক কর্মসূচির পথে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে—এটি তাদের সংগঠনকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পিত উদ্যোগ।
ইসির কাছে একাধিকবার আবেদন করেও কাঙ্ক্ষিত প্রতীক না পাওয়ায় দলটি এখন আইনি নয়, বরং রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ‘শাপলা’ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এনসিপির সিনিয়র নেতারা বলেন, শাপলা প্রতীক না দেওয়ার যুক্তি ‘দুর্বল ও অযৌক্তিক’। তাদের দাবি, কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক পক্ষ ইসিকে প্রভাবিত করছে, যার ফলেই এনসিপিকে ‘সংগঠনিকভাবে কোণঠাসা’ করার চেষ্টা চলছে।
দলের একাধিক নেতা জানান, ইসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও এখনো কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তারা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আবেদন করেছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শাপলা পেতে আন্দোলনই একমাত্র পথ। যতদিন না শাপলা প্রতীক দেওয়া হবে, ততদিন আন্দোলন চলবে।”
গত ১৯ অক্টোবর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে অংশ নেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম। ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে একমাত্র আলোচ্য বিষয় ছিল ‘শাপলা’ প্রতীক।
ইসির পক্ষ থেকে বিকল্প প্রতীক প্রস্তাব করা হলেও শাপলাতেই অনড় থাকে এনসিপি।
সেদিন বৈঠকের পর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা বিজ্ঞপ্তিটা দেবে। এনসিপি বলেছে, তাদের শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা প্রতীক দিতে হবে। তারা (ইসি) এই কথা এ পর্যন্ত বলেনি যে, শাপলা দেবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, তারা প্রতীক বাড়াতে পারেন অথবা কমাতে পারেন। এনসিপি ইসিকে বলে এসেছে, শাপলাকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করে জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। একই সময়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা বিকল্প কেন নেব? এটার আইনগত ব্যাখ্যা তো লাগবে। আমরা দেখেছি, এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যাখ্যা, কোনো কিছুই নির্বাচন কমিশন আমাদের দিতে পারেনি। এজেন্সি (সংস্থা) ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে এনসিপিকে রাজি করানোর চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এনসিপিকে কী মার্কা দেওয়া হবে বা হবে না, তা নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের অনেক আগ্রহ রয়েছে। এটি শঙ্কার কারণ। গত ২২ জুন এনসিপি তাদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেয় এবং শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোন এ তিনটি প্রতীক প্রস্তাব করে। পরে ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে পছন্দ সংশোধন করে জানায়, তারা সাদা বা লাল শাপলা চায়।
৩০ সেপ্টেম্বর ইসি দলটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, অনুমোদিত প্রতীকের তালিকা থেকে একটি প্রতীক বেছে নিয়ে ৭ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে হবে। পরে আরেক চিঠিতে বলা হয়, ১৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রতীক নির্বাচন করতে হবে। ওইদিন এনসিপি ইসির কাছে লিখিতভাবে জানতে চায়, কোন মানদণ্ডে প্রতীক তালিকায় রাখা হয় বা বাদ দেওয়া হয়।
এনসিপি নেতারা বলেন, জাতীয় প্রতীকে চারটি ভিন্ন উপাদান রয়েছে। ইসি এরই মধ্যে বিএনপিকে ‘ধানের শীষ’ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ-রব) ‘তারা’ প্রতীক দিয়েছে। যেহেতু আগেও দুবার এমন হয়েছে সেহেতু এনসিপিকে শাপলা দিতেও বাধা দেখছি না। ইসি আমাদের শাপলা না দিয়ে অন্য প্রতীক চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে।
এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি সপ্তাহেই আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে মিটিং করা হচ্ছে। আমরা শিগগিরই তা জানিয়ে দেব।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা শাপলা প্রতীক চেয়ে আবেদন করলেও আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আইনগত লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছি। কিন্তু কমিশন তা দেয়নি। এনসিপি যদি শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না পায় তাহলে রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ না পেলে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এটা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। হয়তো চলতি সপ্তাহেই আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাব। তিনি বলেন, এটি ইসির স্বাধীন সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে না। আমরা মনে করছি, এর পেছনে রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে বা ইসি কোনো কারণে চাপে রয়েছে। তাই শাপলা প্রতীক নিয়ে অহেতুক সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে।
কবে নাগাদ কর্মসূচি ঘোষণা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছু বিভাগীয় এবং অন্যান্য সমন্বয় সভা হয়েছে। দুটি মহানগরের সঙ্গে সমন্বয় সভা হয়েছে। এখান থেকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



