হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিন দিনব্যাপী আলোচনার চূড়ান্ত পর্ব শুরু হয়েছে। রাজধানীর বেবিচকের সদর দপ্তরে রোববার বিকাল ৩টায় এই আলোচনা শুরু হয়। এতে পরামর্শক হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনসহ (আইএফসি) সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগে যেসব বিষয় অস্পষ্ট ছিল, সেগুলোও এবার স্পষ্ট করেছি। এখন বল তাদের কোর্টে, তাই আমরা অপেক্ষা করছি।’
তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, জাপানি কনসোর্টিয়াম যদি দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায় তবে সরকার বিকল্প আন্তর্জাতিক অপারেটর খুঁজতেও প্রস্তুত। তবে অন্য কোনো দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাওয়া যায়নি বলেও জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘যদি সুমিতোমো রাজি না হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা অন্য অপারেটর খুঁজব, কেন খুঁজব না? আমি বাংলাদেশের জন্য কাজ করি। সেটা জাপান হোক বা অন্য কোনো দেশ, আমার কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ আগে।’
আইএফসি এর আগেই একটি রূপরেখা দিয়েছে এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সমস্ত অমীমাংসিত বিষয়ে স্বচ্ছ সাড়া দিয়েছে উল্লেখ করে পর্যটন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই টার্মিনালটি একটি দক্ষ আন্তর্জাতিক অপারেটরের হাতে পরিচালিত হোক, যাতে সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়।’
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা অর্থায়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তৃতীয় টার্মিনালটি নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এটি ‘পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট গত আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনালটি ব্যবহার করেছিল। কিন্তু জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সমঝোতার অভাবে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
সুমিতোমো করপোরেশন নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামে জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট করপোরেশন, সোজিতজ করপোরেশন এবং জাপানি সরকারি সংস্থা রয়েছে। এদেরকে মূলত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলের আওতায় তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
এই চুক্তি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জাইকার অর্থায়নে নির্মিত প্রকল্পের অংশ হিসেবে করা হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দুই বছরের জন্য নতুন টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, এই সিদ্ধান্তের কারণে কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তারা এখন টার্মিনালের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ ও আয়ের ভাগ চাচ্ছে।
বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের সঙ্গে কনসোর্টিয়ামের আলোচনায় মূল অমীমাংসিত বিষয় হল রাজস্ব ভাগাভাগি। সরকার কত ভাগ পাবে এবং তারা কত ভাগ নেবে- তা নিয়েই দ্বন্দ্ব চলছে।
টার্মিনালটি অক্টোবর ২০২৩ সালে ‘সফট ওপেনিং’ এর মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়। এটি শাহজালাল বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখে উন্নীত করবে এবং কার্গো পরিচালনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
টার্মিনালটি ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও হজ ক্যাম্পের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি ভবিষ্যতে বিমান পরিবহণ খাতের বিকাশে কেন্দ্রীয় ‘হাব’ হিসেবে গড়ে উঠবে।
যদিও বিমান বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, অপারেটর চূড়ান্ত করতে দেরি হলে খরচ বাড়তে পারে। কারণ, টার্মিনালে বসানো যন্ত্রপাতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে প্রকল্পের কৌশলগত সুবিধা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটি ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে নির্মিত হয়েছে। এটির ফ্লোর স্পেস ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার।
উন্নতমানের এই স্থাপনায় থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক ও তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।