জুমবাংলা ডেস্ক: সুসজ্জিত একটি অটো রিকশায় লেখা ‘অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়’। অটো রিকশাটির সামনে-পেছনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করলেই রোগীর কাছে ছুটে যান শাহাবুদ্দিন। এরপর নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেন হাসপাতালে।
শাহাবুদ্দিন গাজীপুর মহানগরীর আউটপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এক সময় অসুস্থ মাকে গাড়ি না পেয়ে কোলে করে হাসপাতালে নেন শাহাবুদ্দিন ও তার ভাই। এরপরও মাকে বাঁচাতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন, ভবিষ্যতে নিজেরা অসহায় মানুষদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। সে সময় সামর্থ্য না থাকায় কিছু করতে না পারলেও পরবর্তীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি চারটি অটো রিকশার মালিক হন। তারপর শুরু করেন মানুষের সেবার এই মহৎ কর্ম।
শাহাবুদ্দিন গত একবছরে গর্ভবতী মাসহ অসহায় প্রায় ৩০০ রোগীকে হাসপাতালে বিনামূল্যে পৌঁছে দিয়েছেন শাহাবুদ্দিন। সে সাধারণত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তবে রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান।
দৃষ্টিনন্দন এই ছোট্ট অটো রিকশাটি প্রায়ই গাজীপুর শহরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে সরকারি হাসপাতাল এলাকায় ছুটে চলতে দেখা যায়। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মুমূর্ষু রোগী কিংবা অসহায়দের অন্তত ৩ থেকে ৫ জনকে বিনা ভাড়ায় হাসপাতাল কিংবা বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে রিকশাটি। ফোন করা মাত্রই লোকেশনে ছুটে যায় এটি। রাস্তায় দুর্ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত রোগীদের সাধারণত কেউ ধরতে চান না, তাদেরও হাসপাতালে পৌঁছে দেন শাহাবুদ্দীনের এই অটো। তার এই কাজের প্রশংসা করছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন এটি মহৎ কর্ম।
গত মাসে প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছিলেন মর্জিনা বেগম। পুরো এলাকায় ঘুরেও কোনও গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ পায় না স্বজনেরা। কোনও উপায় না পেয়ে ফোন দিলেন মো. শাহাবুদ্দিনকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যক্তিগত অটো চালিয়ে হাজির হয় শাহাবুদ্দিন। মর্জিনা বেগমের স্বামী রুহুল আমিন বলেন, সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমার স্ত্রী এবং কন্যা দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। এই উপকারের কথা আমি কখনোই ভুলবো না। নিঃসন্দেহে এটি মহৎ কাজ।
শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি রোগীদের শুধুমাত্র গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে থাকি। আমি নিজের আত্মতৃপ্তি আর অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য সেবা দিই। তবে এই সেবা দিতে গিয়ে আমার অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মহাসড়কে অটো রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। গাজীপুর সদর হাসপাতালে যেতে হয় মহাসড়ক দিয়ে। যার ফলে প্রায় সময় ট্রাফিক পুলিশ আমার গাড়ি আটকে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমার পক্ষে একা সবসময় গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। এজন্য অনেক সময় আমি ব্যস্ত থাকলে অন্য ড্রাইভার দিয়ে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। এজন্য আমার অনেক ব্যয় হয়। তবুও চেষ্টা করি এই কাজটি চালিয়ে যাওয়ার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।