জুমবাংলা ডেস্ক : শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ তহবিলের ঘাটতি মেটাতে মাধ্যমিকের আরো দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আলাদা ফি আদায় করে শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) জমা দিতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে টাকা আদায় সহজ হবে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
এর আগে শুধু ৬ষ্ঠ ও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় শিক্ষকদের জন্য ফি আদায় করা করা হতো। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হলো আরো দুই শ্রেণি। তবে অনার্সের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায়ের পরিকল্পনা থাকলেও সে ব্যাপারে কী তা জানা যায়নি। ভর্তির সময় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে শিক্ষক কল্যাণে আদায় করা টাকা সরাসরি মাউশি অধিদপ্তরে পাঠানোর বিষয়ে জোর দিতে হবে বলে জানান শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী- অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা করে খুলনা ও রংপুর অঞ্চল ছাড়া ৭টি অঞ্চল থেকে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯২ হাজার ৭০৯ টাকা আদায় করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি খুলনা ও রংপুর অঞ্চল থেকেও টাকা পাওয়া গেছে।
সভায় অবসর বোর্ডের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন, পর্যাপ্ত টাকার অভাবে অবসরে যাওয়ার তিন-চার বছর পরেও শিক্ষকরা প্রাপ্য অবসর-আনুতোষিক ভাতা পাচ্ছেন না। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সবর্জনীন পেনশন স্কিমের আওতায় এনে অবসর ভাতা দেয়া যায় কি না এ বিষয়ে জাতীয় পেনশন অথরিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি অবসর সুবিধা বোর্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়। সবর্জনীন পেনশন স্কিমে থাকা সুবিধা এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের প্রবিধানমালা-২০০৫ এ থাকা সুবিধার তুলনামূলক পর্যালোচনা করে একটি কনসেপ্ট পেপার তৈরির ব্যাপারে আলোচনা হয়।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা সচিব বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দ্রুততম সময়ে একটি কনসেপ্ট পেপার প্রণয়ন করে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে সমাধানের পদ্ধতি বের করতে হবে।
এ ছাড়াও অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলের টাকা পাওয়ার পদ্ধতি সহজতর করার জন্য বোর্ডগুলোর সমন্বয়ে ২৯ জানুয়ারি সভার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৬ষ্ঠ, ৮ম, ৯ম ও একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের সময় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অবসর ও কল্যাণ তহবিল বাবদ টাকা বোর্ডগুলোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে আদায় করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্ধারিত হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
এর আগে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট বাবদ ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অনার্সে ভর্তি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ২২০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। কিন্তু শুধু ষষ্ঠ শ্রেণি ও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৩ কোটি। অন্যান্য শ্রেণি থেকে টাকা আদায় শুরুই করা যায়নি। সব শ্রেণি থেকে টাকা আদায় করা হলেও পৌনে দুশ কোটি টাকার বেশি উঠবে না। ফলে কেবল অবসর সুবিধাখাতেই ঘাটতি থাকবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
এদিকে এমপিও থেকে প্রতি মাসে কেটে নেয়া ১০ শতাংশ টাকা ও সে টাকার হিসাব না পেয়েও অসন্তুষ্ট শিক্ষকরা।
প্রসঙ্গত, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ তহবিলে ঘাটতি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ গত বছরের ১০ জানুয়ারি ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার নির্দেশনা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, অধিদপ্তর থেকে পাঠানো ব্যাংক হিসাব নম্বরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই সংগৃহীত টাকা জামা দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর সুফল মেলেনি।
জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালার উপানুচ্ছেদ ১০ ও ৬-এ বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তিকালীন শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট হিসাবখাতে জমা দিতে হবে। এখানে ৭০ টাকা অবসর এবং ৩০ টাকা কল্যাণ তহবিলের হিসাবখাতে জমা দিতে হবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর দুটি আলাদা চিঠির মাধ্যমে নতুন ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের দেয়া ১০০ টাকা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ও নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলাদা তহবিলে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।
পরবর্তীতে আবারো ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর ও গত বছরের ১০ জানুয়ারি আরো দুই চিঠির মাধ্যমে মাউশি অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা জমা দিয়ে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসারদের অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়। তবে কিছু জেলা ছাড়া অধিকাংশ জেলা থেকে তথ্য এখনো জমা হয়নি।
Honor X9c : দেশের বাজারে ঈদের আগেই নতুন ফোন উন্মোচন করল অনার
২০২২ খ্রিষ্টাব্দে একাদশে ভর্তির সময় থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০০ টাকা করে তোলা শুরু হয়। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলে ভর্তির সময়ও তোলা হয়েছে ১০০ টাকা করে।
সূত্র : দৈনিক আমাদের বার্তা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।