শিক্ষকদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত প্রত্যাশিত এবং আবেগঘন মুহূর্ত। বহুদিন ধরেই শিক্ষক সমাজ তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। অবশেষে ২০২৫ সালের আসন্ন বাজেটে শিক্ষকদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো নিয়ে আসছে বড় পরিবর্তন
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে। এই খবর নিশ্চিত করেছেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, “শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি ৫ থেকে ৬ বছরের অবসর-কল্যাণ ভাতার বকেয়া মেটানো হবে।” এটি নিঃসন্দেহে দেশের লক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য বড় প্রাপ্তি।
Table of Contents
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুধু আর্থিক উন্নয়নই নয়, শিক্ষক পেশার মর্যাদা এবং মানসিক প্রেরণাও বাড়বে। ড. মাহমুদের মতে, তিনি যতদিন শিক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন, প্রতিদিন আন্দোলনকারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়ার কথা শুনেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন, শিক্ষক সমাজ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে, পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে। কারণ শিক্ষা খাতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও করা হবে। স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্কুলে বাচ্চাদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে, তাই শিক্ষাখাতে নজর দিতে হবে।”
অবসর-কল্যাণ ভাতা এবং পরিচালন ব্যয়ে বড় বরাদ্দ
শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল অবসর-কল্যাণ ভাতা পরিশোধের। ৫ থেকে ৬ বছরের বকেয়া ভাতা এখনও পরিশোধ হয়নি, যা শিক্ষকদের আর্থিক কষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বাজেটে সেই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন জানান, জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ এ পরিচালন ব্যয় বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, “উন্নয়ন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে অতটা বাড়ানো যায়নি। তবে পরিচালন ব্যয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ফোকাস থাকবে।” এর মাধ্যমে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ এগোনো হবে।
তিনি আরও বলেন, “ঘাটতি বাজেট দিয়ে জনগণের উপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। তাই বাজেট ছোট করা হবে, তবে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করাই মূল লক্ষ্য।”
জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং শিক্ষাখাত
২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে। এই বরাদ্দের মাধ্যমে স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের সহায়ক উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের প্রায় ৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে। এতে শিক্ষাখাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মূল উদ্দেশ্য: শিক্ষাখাতে মানবিক ও কাঠামোগত উন্নয়ন
- বেতন-ভাতা বৃদ্ধি: শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
- অবসর ভাতা পরিশোধ: পূর্বের বকেয়া নিষ্পত্তির মাধ্যমে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা।
- অবকাঠামো উন্নয়ন: স্কুলের ভবন, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি ও টয়লেট সংস্কার।
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ: পাঠদানের মানোন্নয়নের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ।
- শিক্ষার্থীদের সহায়তা: বই, ইউনিফর্ম, মিড ডে মিল ইত্যাদি।
নতুন বাজেটে মূল্যস্ফিতি ও ঋণ বোঝা রোধে পরিকল্পনা
শিক্ষাখাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট তৈরি হলেও, সরকারের প্রধান লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফিতি কমিয়ে আনা। জনগণের উপর ঋণের বোঝা যাতে না পড়ে, সেজন্য বাজেট হবে ঘাটতি কমানো এবং শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশিত।
একইসঙ্গে ভর্তুকি কমানো না গিয়েও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জাতীয় উন্নয়নের গতি বাড়বে।
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি শুধু একটি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নয়, এটি একটি সামাজিক ও মানবিক উদ্যোগ, যা আগামী দিনের ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়তে সহায়ক হবে।
FAQs
১. শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কত শতাংশ বাড়বে?
এখনও নির্দিষ্ট হার ঘোষণা হয়নি, তবে বাজেটে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
২. অবসর ভাতার বকেয়া কীভাবে পরিশোধ হবে?
২০২৫-২৬ বাজেটে পরিচালন ব্যয় থেকে ৫-৬ বছরের বকেয়া অবসর ভাতা পরিশোধ করা হবে।
৩. শিক্ষাখাতে উন্নয়ন বাজেটে কী কী বরাদ্দ থাকবে?
স্কুল অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক উপকরণ ও প্রযুক্তি উন্নয়ন বরাদ্দে থাকবে।
৪. শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কবে থেকে বাস্তবায়ন হবে?
বাজেট পাশ হওয়ার পর থেকেই পর্যায়ক্রমে সুযোগ-সুবিধাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
৫. বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে একসঙ্গে গুরুত্ব দেয়ার কারণ কী?
দুই ক্ষেত্রেই জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের বিষয় জড়িত, তাই এই খাতদ্বয়ে পরিচালন ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
৬. এই সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের উপর কী প্রভাব ফেলবে?
আর্থিক স্বস্তির পাশাপাশি পেশাগত মর্যাদা ও মানসিক অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি পাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।