জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট এ ইউ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালীন অনৈতিক সুবিধা না দেয়ায় কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত একজন শিক্ষিকাকে গালিগালাজসহ চাকুরিচ্যুত ও হাত কেটে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন অর্পিতা নামের এক পরীক্ষার্থীর পিতা এনামুল হক। হামলার আশঙ্কায় পরীক্ষা শেষে ওই শিক্ষককে পুলিশ পাহারায় তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহের আলীকে সভাপতি এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ও উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলামকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ।
পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালনকারী ও চিলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষিকা চায়না বেগম জানান, এনামুল হকের কন্যা অর্পিতা থানাহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী হিসেবে থানাহাট এ ইউ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে।
মঙ্গলবার পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরে ওই পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্র জমা দিতে বলা হয়। সে তা না দিয়ে লিখতে থাকে। ফলে অন্য পরীক্ষার্থীরাও অর্পিতার মতো সময় দাবি করে। এ সময় হৈচৈ শুনে সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহেদুল ইসলাম কক্ষে আসেন। তার উপস্থিতিতে সবার উত্তরপত্র নেয়া হয়। এতে অর্পিতা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয় এবং দোতালার বারান্দা থেকে তার বাবা এনামুল হককে ডেকে আনে। এনামুল হক এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করার পাশাপাশি চাকুরিচ্যুত ও হাত কেটে নেয়ার হুমকি দেয়।
এরপর কেন্দ্র সচিবের কক্ষে আসলে সেখানেও গালিগালাজ করে এবং মাঠে তার পক্ষের লোকজন হুমকি দিতে থাকে। তিনি আরও জানান, বুধবার ( ৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক তাকে মোবাইল করে এ ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। থানাহাট এ ইউ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব শেফাউন নাহার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা শান্ত করার পর ওই কক্ষ পরিদর্শককে সরিয়ে আনা হয়।
এরপর পরীক্ষা শেষে এনামুল হক তার মেয়েকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিয়ে আসে। এ সময় তার সাথে লোকজন এসে হৈচৈ শুরু করলে পরিস্হিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরে পুলিশের সহায়তায় পরিবেশ শান্ত করে চায়না বেগমকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। অভিভাবক এনামুল হক ঘটনাটি ঠিক করেনি বলে তাকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময়কেন্দ্র কমিটির সদস্য বজরা তবকপুর উচ্চ বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক ও বালাবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপস্হিত ছিলেন। তাদের উপস্হিতিতে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এনামুল হক দাবি করেছেন, পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র রিভাইসড দেয়ার সুযোগ না দিয়ে তা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এজন্য ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কেন্দ্র সচিবের কাছে অভিযোগ করেছি। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনামুল হক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের স্ত্রীর বড় ভাই (শ্যালক)। তিনি চিলমারীর থানাহাট ইউনিয়নের দাওয়াইটারী এলাকার অধিবাসী এবং ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।