জুমবাংলা ডেস্ক : শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রস্তুত, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, এমপিওভুক্তিসহ নানা কাজে যুক্ত সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম বা সেসিপ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত প্রায় এক হাজার ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে অর্থসংকটে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বেতন-ভাতা না পেলেও নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেসিপ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সেসিপ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ ছিল। প্রকল্পটি সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক-এ অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন-১) মনিরা বেগম বলেন, ‘সেসিপ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত কারণে বেতন-ভাতা বন্ধ ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। একনেক থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তারা বকেয়াসহ বেতন-ভাতা পাবেন।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে ২০০১-২০০৭ মেয়াদে সেসিপ প্রকল্প চালু হয়। পরে তা এসইএসডিপি নামে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। এরপর প্রকল্পটি সেসিপ নামে ২০১৪ সাল থেকে চলছে। ৭ বার মেয়াদ বাড়িয়ে এ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
সেসিপ প্রকল্পের আওতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর (ইইডি), বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন এবং প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ), ইএমআইএস সেল এবং বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো কাজ করে থাকে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এসব সংস্থা পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রস্তুত, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য সরবরাহসহ নানা কাজে জড়িত। তবে প্রকল্পের আওতায় এসব সংস্থায় কর্মরত এক হাজার ১৮৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বেতন না হওয়ায় অনেকে ধার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইএমআইএস সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোজার ঈদের আগে রাত তিনটা পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে কাজ করেছি। অথচ আমরা কোনো বেতন-ভাতা পাইনি। টাকার অভাবে সন্তানদের কোনো কিছু কিনে দিতে পারিনি। আমাদের জমানো কোনো টাকাও ছিল না। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।’
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানান, ‘সবাই মনে করে সরকারি চাকরি করি। এজন্য না পারি মানুষের কাছে ধারদেনা করতে আবার না পারি নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে। ঋণ করে রোজার ঈদ পার করেছি। এক মাসের বাসা ভাড়া বাকি। কিস্তি দেয়া লাগে। এরপর আবার ধার করে চলতে হচ্ছে। আমার ওষুধ কেনা লাগে প্রতি মাসে প্রায় দুই হাজার টাকার। ফার্মেসিতেও বাকি পড়ছে। কীভাবে চলছি আল্লাহ্ জানে।’
সংস্থাটির আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হলেও সেসিপ প্রকল্পে কর্মরতদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ২০১৭ সালে সম্মতি মিললেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের টালবাহানায় সেটি আর রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘বেতন বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিষয়টির স্থায়ী সমাধান জরুরি। আমাদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করায় প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দক্ষ জনবলে পরিণত হয়েছে। তাদের কাজে লাগালে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’ সূত্র : দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।