সুদীপ চাকমা,কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষার্থীপ্রতি সরকার ২০২১ সালে ব্যয় করেছে ৬৩ হাজার ৫২৪ টাকা। যা সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথেষ্ট কম। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দিক থেকে এখনও পিছিয়ে রয়েছে কুবি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রকাশিত ৪৮ তম বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।
কুবি’র মোট ৬ হাজার ৩৮৪ জন শিক্ষার্থীর পিছনে সরকার ৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। যার মধ্যে, শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা, পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তা, পেনশন ও অবসর সহায়তা, গবেষনা অনুদান, যন্ত্রপাতি, যানবাহন, তথ্য ও প্রযুক্তি অনুদান সহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত।এর আগে সরকার ২০১৯, ২০২০ সালে শিক্ষার্থীপ্রতি যথাক্রমে ৬২ হাজার ৬২৭ টাকা ও ৬৫ হাজার ৮৩৪ টাকা ব্যয় করেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রতি ৯৩ হাজার ৫৮৯ টাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রতি ৭৬ হাজার টাকা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রতি ৬৭ হাজার ১৯৬ টাকা ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রতি ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৩৭ টাকা ব্যয় করে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও ২০২১ সালে শিক্ষার্থী প্রতি দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় করে।
দেখা যায়, সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় একজন শিক্ষার্থী পিছনে কুবি সবচেয়ে কম টাকা ব্যয় করেছে।
এছাড়া, প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালে কুবি’র শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৪ কিন্ত ২৬৬জন শিক্ষকের মধ্যে ৫৭ জন শিক্ষকই ব্যক্তিগত বা গবেষণার কাজে ছুটিতে রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক ১:২০ মানদণ্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে কুবি। যেখানে নোবিপ্রবি’র ১:১৯, জাককানইবি’র ১:২২.৪১ ও যবিপ্রবি’র ১:১২ এবং রাবি’র ১:২৪।
তাছাড়াও, বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী কুবি’তে কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৬৭ এবং কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩০। যার কারণে কুবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সময়মতো সেবা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে। যেখানে জাককানইবি’তে কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪৩.২০, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৮.৬০। যবিপ্রবি’তে কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৯, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৯।
শিক্ষার্থীরা জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসহ নানান অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশি করে অর্থায়ন করা হোক। যাতে কুবির শিক্ষার্থীরাও সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো সমান সুযোগ সুবিধা পাই।’
এই বিষয়ে অর্থ হিসাব দপ্তরের পরিচালক কামাল উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, “আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই কৃচ্ছ্রতাসাধন করতে বাধ্য হয়েছি। তাই বাজেটে যে টাকা ধরা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ ব্যয় করা হয়নি। অনেক ব্যয় খাত আছে যেগুলো সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যয় করতে পারি নাই।”
শিক্ষার্থীর তুলনায় কর্মকর্তা ও কর্মচারী কম কেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা জনবল নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে অনুমোদন চেয়েছি কিন্তু তা এখনও পাই নাই। যদি অনুমোদন পাই তাহলে আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে”
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, “সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অনেক কম তাই শিক্ষকদের পিছনে খরচও কম করতে হয়। আর যেগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আনুষঙ্গিক খরচ বেশি। পুরানো বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বেশি লাগে কারণ তাদের শিক্ষকের সংখ্যা বেশি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরাও চাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকার অর্থে গুণগত শিক্ষার মান নিশ্চিত হোক। তাই যে যে পদে লোকবল কম সে পদগুলো পূর্ণ করতে হবে। আর যে বিভাগ গুলোতে শিক্ষক কম সেই বিভাগ গুলোতে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।