বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষকের চরম সংকট ও সরকারি কলেজগুলোতে পাঠদানের মারাত্মক সমস্যা বিবেচনায় রেখে শিক্ষার বিশেষ বিসিএস আয়োজনের ঘোষণা এসেছে।
শিক্ষার বিশেষ বিসিএস: একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ
সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের ক্লাস চালানোই সম্ভব হচ্ছে না। দেশের ৬৬৩টি সরকারি কলেজের প্রায় ২৫ শতাংশ পদ শূন্য। এই বাস্তবতায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এবার ৬৮৩ জন প্রভাষক নিয়োগের লক্ষ্যে শিক্ষার বিশেষ বিসিএস আয়োজন করছে।
Table of Contents
এই উদ্যোগ শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন নয়, বরং এসডিজি লক্ষ্য পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতির একটি অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ১,০৪৭ জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারপর দীর্ঘ দেড় যুগে আর কোনো আলাদা শিক্ষা বিসিএস অনুষ্ঠিত হয়নি।
কেন প্রয়োজন শিক্ষার জন্য আলাদা বিসিএস?
একাধিক গবেষণা ও প্রশাসনিক প্রতিবেদন বলছে, শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদানে ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি ও শিক্ষাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার হার বেড়েছে। এমনকি ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের বাইরে অধিকাংশ কলেজেই শিক্ষকের অভাব প্রকট।
গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, ৮১টি শিক্ষকের পদের মধ্যে ২৫টি শূন্য রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পর্যন্ত নেই। ব্যানবেইসের তথ্যমতে, প্রতি শিক্ষকপিছু ৯৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জনপ্রশাসন উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ এবং অগ্রগতি
২০২৪ সালের আগস্টে গঠিত জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির নেতৃত্বে এসেছে এই বিশেষ বিসিএসের সুপারিশ। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটির সদস্যরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেক্টরে সংকট নিরসনে প্রাধান্য দেন।
এই সুপারিশের ভিত্তিতে পিএসসি কাজ শুরু করেছে এবং স্বল্পতম সময়ে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য ক্যাডারেও ৩,০৩০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদিও পূর্ববর্তী শিক্ষাবিষয়ক বিসিএস উদ্যোগগুলো আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের কারণে বাস্তবায়িত হয়নি, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। শিক্ষক সংকটের তীব্রতা এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসন আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়।
৪৩ থেকে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষাগুলোকে ঘিরে কিছু প্রশাসনিক জটিলতা থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারের এই বিশেষ উদ্যোগ সবার নজর কাড়ছে। এতে শুধু শিক্ষক নিয়োগই নয়, বরং গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ বিসিএস বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরি চাহিদার ভিত্তিতে এ নিয়োগ কার্যক্রমের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার বিশেষ বিসিএস বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ভারসাম্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহী তরুণদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
FAQs
শিক্ষার বিশেষ বিসিএস কী?
এটি একটি আলাদা বিসিএস প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শুধু শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
কতজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে?
প্রাথমিকভাবে ৬৮৩ জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হবে, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত।
শেষ কবে বিশেষ শিক্ষা বিসিএস হয়েছিল?
সর্বশেষ ২০০৬ সালে ২৬তম বিসিএসের মাধ্যমে ১,০৪৭ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল।
এই বিসিএসে কোন ক্যাডার অন্তর্ভুক্ত?
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এই দুইটি ক্যাডারেই এবারের বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হচ্ছে।
কেন এতদিন পর এই উদ্যোগ নেওয়া হলো?
সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট ও পাঠদানে ঘাটতি দেখা দেওয়ার ফলে এটি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।