সিব্বীর ওসমানী: সাবরিনা সরকার। পেশায় শিক্ষিকা হলেও বর্তমানে নরসিংদীতে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত তিনি।
নরসিংদী সার্কিট হাউজের পাশে অবস্থিত পিনাকল চার্টার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা সাবরিনা সরকার। সবকিছু একরকম ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বিশ্বব্যাপী দেখা দেয় মহামারি করোনাভাইরাস। দুনিয়াজুড়ে তাণ্ডব চালানো করোনার থাবা থেকে রেহাই পায়নি বাংলাদেশও। করোনার লাগাম টানতে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রায় গৃহবন্দী হয়ে পড়েন সাবরিনা। অবসর সময় কাটাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সময় ব্যয় করতে থাকেন তিনি। ঠিক তখনই ফেসবুকে উদ্যোক্তাদের গ্রুপ ‘উই’এর খোঁজ পান তিনি। যথারীতি ‘উই’ গ্রুপের এর সদস্য হন সাবরিনা। ‘উই’ এর নিয়মিত পোস্ট পড়েই নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপন্ বুনতে থাকেন তিনি।
আর চলার পথে সাবরিনা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পান তার পরিবার থেকেই। এই উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে পাশে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো ছিলেন তার স্বামী ফারুক সরকার। তাছাড়া ছেলেবেলা থেকেই সব কিছুতে নতুনত্ব খোঁজা এবং নিজেকে মেলে ধরার ইচ্ছাটাই সাবরিনাকে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করতে সাহায্য করে।
দেশীয় পণ্য হিসেবে জামদানির প্রতি সাবরিনা সরকারের দুর্বলতা ছিল সবসময়। আর তাই স্বামী ফারুক সরকারের সহযোগিতায় শুরু করেন সব ধরনের জামদানি পণ্য নিয়ে কাজ।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সাবরিনা সরকারের জন্য আনুষঙ্গিক সব কাজ পরিচালনা করাটা খুব কঠিন ছিল। তারপরও থেমে যাননি তিনি। ফেসবুকে পেজ খুলেন সাবরিনা’স কালেকশন নামে। নিয়মিত পোস্ট ও শেয়ার করে নিজের পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি। জামদানি শাড়ি, থ্রি পিস, ওয়ান পিস নিয়ে তার এক বিশাল কালেকশন। আর নিয়মিত পোস্টের মাধ্যমে নিজের পেজ ও গ্রুপ থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক সারা পান তিনি। মাত্র এক মাসের মধ্যেই ‘উই’ এর লাখপতির খাতায় নাম আসে সাবরিনা সরকারের।
প্রথমে খুচরা হিসেবে বিক্রি করলেও এখন সাবরিনা’স কালেকশন এবং ‘উই’ গ্রুপে জামদানি পণ্য হোলসেল করেন এই উদ্যোক্তা। ২০২০ সালের ১৬ জুন থেকে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাবরিনা’স কালেকশনের মোট বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
শিক্ষিকা থেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পথচলা নিয়ে সাবরিনা সরকার জুমবাংলাকে বলেন, তার চলার পথ মসৃণ ছিল না। কখনো কখনো আশেপাশে থাকা মানুষগুলোর অনেক রকমের কথায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। কিন্তু সবসময় মানসিকভাবে সহায়তা পেয়েছেন তার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাগনি আফসানা ইমু্র কাছ থেকে।
নরসিংদী সদর উপজেলার সাটিরপাড়া এলাকায় বসবাস করেন ফারুক-সাবরিনা দম্পতি। ব্যক্তিগত জীবনে ফাহমি আরহাম নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে এই দম্পতির।
সাবরিনা সরকার তার অদম্য ইচ্ছা, সততা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তার উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।
নতুনদের উদ্দেশ্যে সাবরিনা সরকার বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে শুধু চাকরির আশায় না থেকে নিজের মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা উচিত । তার সাথে সাথে দেশীয় পণ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা আমাদের সবারই দায়িত্ব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।