মায়ের কোল থেকে নামিয়ে শিশু যখন প্রথমবারের মতো স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিনে আঙুল বুলায়, সেই মুহূর্তটি যেন এক নতুন পৃথিবীর দরজা খুলে দেয়। চোখেমুখে বিস্ময়, কৌতূহলে ভরা সেই আঙুলের ট্যাপে খুলে যায় রঙিন গেমের জগৎ, কার্টুনের রাজ্য। কিন্তু এই ডিজিটাল খেলাঘরেই লুকিয়ে আছে অদৃশ্য বিপদ—অপব্যবহারকারী, ইনঅ্যাপারচেজের ফাঁদ, বিষাক্ত কনটেন্ট। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশুর সংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩০০% বেড়েছে (বিবিসি বাংলা, ২০২৩), অথচ ৭২% অভিভাবক স্বীকার করেন তারা জানেন না কিভাবে শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ চিনবেন। ঢাকার মিরপুরের রিনা আক্তারের ৮ বছরের ছেলে রাফিদের গোপনে ইন-গেম ক্রয় নিয়ে টেনশন, চট্টগ্রামের রেজাউল করিমের মেয়ে অরিত্রীর ইউটিউব কনটেন্ট এক্সপোজার—এই গল্পগুলো শুধু সংখ্যা নয়, আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি। আজকের এই গাইডে আমরা শিখবো কিভাবে ডিজিটাল ঝুঁকির মাঝেও তৈরি করবেন শিশুর জন্য নিরাপদ ডিজিটাল স্পেস, বেছে নেবেন প্রযুক্তির উপহারকে অভিশাপে রূপান্তরিত হতে দেবেন না।
শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ: কেন এই নির্বাচন জীবন-মরণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে?
ঢাকার উত্তরা থেকে শুরু করে সিলেটের রেমা-কালেঙ্গা—সবখানেই আজ শিশুর হাতে স্মার্টফোন। কিন্তু এই সহজলভ্যতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিপদগুলো কি আমরা বুঝতে পারি? গ্লোবাল থিংক লিংক রিসার্চের ২০২৪ সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশে ৫-১২ বছর বয়সী শিশুদের ৬৭% প্রতিদিন ২ ঘন্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করে। অথচ এদের মাত্র ১৫% ব্যবহার করছে COPPA (Children’s Online Privacy Protection Act)-সম্মত অ্যাপ। অ্যান্ড্রয়েডের গুগল প্লে স্টোরে “শিশুদের গেম” লিখে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় ভেসে উঠবে এমন অ্যাপ যেখানে লুকানো আছে অ্যাগ্রেসিভ অ্যাডস, ইন-অ্যাপ পারচেজের চাপ, এমনকি অপব্যবহারকারীদের সাথে চ্যাটের সুযোগ। খুলনার এক স্কুলশিক্ষিকা ফারজানা ইয়াসমিনের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ: তার ১০ বছরের মেয়ে “ফ্রি ড্রেসিং গেম” নামক এক অ্যাপে ক্লিক করতেই চলে গিয়েছিল অশ্লীল কনটেন্টের সাইটে!
শিশুদের ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রধান শত্রুগুলো হলো:
- ডেটা হ্যারভেস্টিং: অনেক “ফ্রি” শিশুতোষ অ্যাপ গোপনে সংগ্রহ করে শিশুর লোকেশন, ডিভাইস আইডি, এমনকি অভিভাবকের ফোন নম্বর
- এজ-ইনঅ্যাপারচেজের ম্যানিপুলেশন: উজ্জ্বল রঙের ‘ক্লিক হিয়ার’ বাটনে শিশুকে প্রলুব্ধ করে করানো হয় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রয়
- অপযুক্ত কনটেন্ট: কার্টুন চরিত্রের ছদ্মবেশে লুকানো সহিংসতা বা যৌন ইঙ্গিত
- অনাকাঙ্ক্ষিত সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশন: গেমের চ্যাট বক্সে বুলিয়িং বা গ্রুমিংয়ের ঝুঁকি
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে স্থানীয় অ্যাপ ডেভেলপারদের ৮৫%-ই শিশুদের ডেটা প্রাইভেসি নীতিমালা মানছে না বলে। রাজশাহীর একটি সাইবার ক্যাফেতে ১২ বছরের আদনান “ফ্রি ফায়ার” গেমে স্কিন কিনতে গিয়ে মায়ের মোবাইল ব্যালেন্স থেকে ৩,৫০০ টাকা হারায়—এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা আমাদের অজ্ঞতার ফল। শিশুরা প্রযুক্তিতে পারদর্শী হলেও ঝুঁকি বিচার করার ক্ষমতা তাদের নেই। তাই শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ নির্বাচন শুধু প্যারেন্টিংয়ের অংশ নয়, ডিজিটাল যুগের বেঁচে থাকার কৌশল।
নিরাপদ অ্যাপ চিনবার বিজ্ঞান: অভিভাবকদের হাতে থাকুক এই চেকলিস্ট
শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ বাছাইয়ে ভরসা করা যায় না শুধু অ্যাপের আইকন বা রেটিংয়ে। চাই সচেতন স্ক্রিনিং। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট ড. ফাহমিদা হাসানের মতে, “অ্যাপ ইনস্টলের আগে অভিভাবকদের ৩-স্তরীয় সুরক্ষা পরীক্ষা আবশ্যক: প্রাইভেসি পলিসি, পারমিশন ম্যাপ, এবং বয়স-উপযোগীতা সনদ।”
ধাপ-১: প্রাইভেসি পলিসির গভীরে দেখুন
- COPPA কমপ্লায়েন্স: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আইন শিশুর ডেটা সুরক্ষার গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড। অ্যাপের ‘সেটিংস’ বা ‘অ্যাবাউট’ সেকশনে খুঁজুন COPPA সার্টিফিকেশন। উদাহরণ: Khan Academy Kids।
- ডেটা কালেকশন ট্রান্সপারেন্সি: ইউরোপিয়ান জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (GDPR) শিশু ডেটা সংরক্ষণে কঠোর। অ্যাপটি যদি GDPR-কমপ্লায়েন্ট হয় (যেমন: Duolingo Kids), তবে তা নির্ভরযোগ্য।
- থার্ড-পার্টি শেয়ারিং: বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের গাইডলাইন অনুযায়ী, শিশুদের ডেটা কোনওভাবেই তৃতীয় পক্ষের সাথে শেয়ার করা যায় না।
ধাপ-২: পারমিশন এনালাইসিস—কী দরকার আর কী অনর্থক
- অপ্রয়োজনীয় পারমিশন রেড ফ্ল্যাগ: ডাউডলিং অ্যাপের কি মাইক্রোফোন এক্সেস লাগবে? গাণিতিক পাজল গেমের ক্যামেরা পারমিশন কেন? অ্যান্ড্রয়েডে Settings > Apps > [App Name] > Permissions-এ গিয়ে বাতিল করুন অপ্রয়োজনীয় এক্সেস।
- লোকেশন ট্র্যাকিং: শিশুর রিয়েল-টাইম লোকেশন শেয়ার করা অ্যাপ (যেমন কিছু প্যারেন্টাল ট্র্যাকার) বিপজ্জনক হতে পারে। বিকল্প হিসেবে Google Family Link ব্যবহার করুন যেখানে লোকেশন শেয়ার অপশনাল।
ধাপ-৩: বয়স রেটিং ও কনটেন্ট অডিট
- ESRB/IARC রেটিং: আন্তর্জাতিক এই রেটিং সিস্টেম (যেমন: EC-Early Childhood) দেখে নিন গুগল প্লে বা অ্যাপল স্টোরে। বাংলাদেশে BTRC এই রেটিং মানার পরামর্শ দেয়।
- কনটেন্ট প্রিভিউ: অ্যাপ ডাউনলোডের আগে ইউটিউবে সার্চ করুন “[অ্যাপ নাম] gameplay” বা “review”। দেখুন ভিডিওতে আসল ইন্টারফেস কেমন।
- ইন-অ্যাপ অ্যাডসের মাত্রা: ABCmouse বা PBS Kids Games-এর মতো অ্যাপে শূন্য বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন থাকলেই তা কিডস সেফ হওয়া চাই।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে বিশেষ সতর্কতা:
- ইংরেজি-বাংলা মিশ্রণ: অনেক স্থানীয় অ্যাপে (যেমন: টেন মিনিট স্কুল কিডস) বাংলা ইন্টারফেস থাকলেও প্রাইভেসি পলিসি শুধু ইংরেজিতে! গুগল ট্রান্সলেট দিয়ে অনুবাদ করে জেনে নিন।
- ইউটিউব কিডসের ফাঁদ: বাংলাদেশে জনপ্রিয় হলেও এতে ব্যবহারকারী-আপলোডেড ভিডিওতে অপ্রত্যাশিত কনটেন্ট ঢুকে পড়ে। স্ট্রিক্ট “অ্যাপ্রুভড কনটেন্ট” মোড চালু রাখুন।
শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ বাছাইয়ে এই টুলগুলো কাজে লাগান:
- Common Sense Media (commonsensemedia.org): ৩০,০০০+ অ্যাপের বয়স-উপযুক্ততা রিভিউ
- Google Family Link: অ্যাপ ব্লক/অ্যালাউ করার পাশাপাশি স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্ট
বাংলাদেশে শিশুদের ডিজিটাল সুরক্ষা: আইন, বাস্তবতা এবং আমাদের করণীয়
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ পাস হয়েছে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ এবং জনসচেতনতার কী অবস্থা? ঢাকার গুলশানে বসবাসকারী আইটি পেশাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, “আইনে শিশুদের ডেটা প্রাইভেসির কথা বলা হলেও স্থানীয় অ্যাপ ডেভেলপাররা এখনও পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন বা ডেটা এনক্রিপশন সঠিকভাবে প্রয়োগ করে না।” কুমিল্লার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯০% অভিভাবক জানেন না যে বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষার জন্য একটি আলাদা আইন আছে!
বাংলাদেশের শিশুদের জন্য উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাপ ক্যাটাগরি:
- ফ্রি এডুকেশনাল অ্যাপস: বাংলা বর্ণমালা শেখার অ্যাপগুলোতে হঠাৎ পপ-আপ আসে ডেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন
- মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং অ্যাপস: Free Fire, PUBG Mobile-এ ভয়েস চ্যাটের মাধ্যমে অপরিচিতদের সাথে সংযোগ
- সোশ্যাল মিডিয়া লাইট ভার্সন: Facebook Lite বা Instagram Lite-এ ফিল্টারিং সিস্টেম দুর্বল
জাতীয় পদক্ষেপ ও গ্যাপ:
- শিশু অধিকার ফোরাম বাংলাদেশ চালু করেছে হেল্পলাইন (১০৯৮), যেখানে শিশুরা ডিজিটাল হয়রানির রিপোর্ট করতে পারে।
- বিটিআরসি‘র “সাইবার সুরক্ষা সচেতনতা ক্যাম্পেইন” স্কুল পর্যায়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে গ্রামীণ এলাকায়।
- শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে সরকারি ইনসেনটিভ না থাকায় স্থানীয় ডেভেলপাররা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড থেকে পিছিয়ে।
সফলতা গল্প: রাজশাহীর এক স্কুলের মডেল
রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল চালু করেছে “ডিজিটাল সিটিজেনশিপ কারিকুলাম“। এখানে শেখানো হয়:
- কিভাবে অ্যাপের পারমিশন বুঝতে হয়
- ইন-অ্যাপ ক্রয়ের ঝুঁকি চিহ্নিত করা
- অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ারে সতর্কতা
এই মডেলটি এখন বাংলাদেশের ৫০+ স্কুলে রোল আউট হচ্ছে।
অভিভাবকদের জন্য হাতেকলমে টুলকিট: স্ক্রিন টাইম থেকে সেফ সার্চ পর্যন্ত
শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ নির্বাচনের পরও প্রয়োজন সক্রিয় মনিটরিং। এই টিপসগুলো বাস্তবায়ন করুন:
১. অপারেটিং সিস্টেম লেভেল সুরক্ষা:
- অ্যান্ড্রয়েডে: Google Family Link অ্যাপে গিয়ে:
- শিশুর অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন (১৩ বছরের নিচে)
- Approve or block apps অপশনে অ্যাপ ব্লক/অ্যালাউ করুন
- Set screen time limits: প্রতিদিন ১ ঘন্টা নির্ধারণ করুন
- আইওএসে: Screen Time মেনুতে:
- Content & Privacy Restrictions চালু করুন
- iTunes & App Store Purchases বন্ধ করুন
- Allowed Apps-এ শুধু শিক্ষামূলক অ্যাপ রাখুন
২. নেটওয়ার্ক-লেভেল সুরক্ষা:
- সেফ ব্রাউজিং: Google Wifi বা Norton Family রাউটারে ফিল্টারিং চালু করুন।
- DNS ফিল্টারিং: Cloudflare for Families (1.1.1.3) ব্যবহার করে ব্লক করুন ম্যালওয়্যার সাইট।
৩. প্র্যাকটিক্যাল হোম রুলস:
- ডিভাইস চার্জিং স্টেশন: রাত ৯টার পর সব ডিভাইস রাখুন লিভিং রুমের চার্জিং বক্সে।
- অ্যাপ রিভিউ ডে: প্রতি শনিবার বাচ্চার সাথে বসে অ্যাপের একটিভিটি রিপোর্ট চেক করুন (অ্যান্ড্রয়েডে Digital Wellbeing মেনুতে)।
- ডিজিটাল ডিটক্স: প্রতি মাসে এক দিন “নো স্ক্রিন ডে” পালন করুন, পরিবারবন্ধন শক্ত করুন।
৪. বাংলাদেশি অভিভাবকদের বিশেষ টিপস:
- রিচার্জেবল ডিজিটাল ওয়ালেট: শিশুর গেম অ্যাকাউন্টে সরাসরি কার্ড যুক্ত না করে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে সীমিত ব্যালেন্স লোড করুন।
- ইউটিউব অল্টারনেটিভ: Bd Kids Tube (বাংলাদেশি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিডিও) বা Sesame Street Bangla ব্যবহার করুন।
- অ্যাপ ব্লক করার বাংলা টিউটোরিয়াল: অনুসন্ধান করুন “বাচ্চার মোবাইলে অ্যাপ ব্লক করার উপায়” — বিটিআরসির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আছে ভিডিও গাইড।
শিশুদের জন্য বিশ্বস্ত অ্যাপের তালিকা: শিক্ষা থেকে বিনোদনের নিরাপদ প্লাটফর্ম
শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ খুঁজতে গেলে এই আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অপশনগুলো বিবেচনা করুন:
শিক্ষামূলক অ্যাপস:
- Khan Academy Kids (বয়স: ২-৮ বছর): গাণিতিক ধারণা, ইংরেজি রিডিং — বিজ্ঞাপনমুক্ত, COPPA/GDPR কমপ্লায়েন্ট।
- Duolingo ABC (বয়স: ৩-৬ বছর): বর্ণমালা শেখার গেম, বাংলাদেশি বাংলা ইন্টারফেস সমর্থিত।
- বাংলা শিশু শিক্ষা (বাংলাদেশি অ্যাপ): স্থানীয় ডেভেলপারদের তৈরি, অফলাইন কাজ করে, মেমোরি গেমস আছে।
ক্রিয়েটিভিটি অ্যাপস:
- PBS Kids Games (বয়স: ৪-৯ বছর): ড্রয়িং, স্টোরি মেকিং — বিজ্ঞাপনহীন, বাচ্চাদের পরিচিত কার্টুন চরিত্র।
- Toca Boca সিরিজ (বয়স: ৬-১২ বছর): ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এক্সপ্লোরেশন, কোনো ইন-অ্যাপ ক্রয় নেই।
বাংলাদেশি কনটেন্টের অ্যাপস:
- চিলড্রেন্স টিভি অ্যাপ: বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, লাইভ টিভি দেখার অপশন।
- ই-বুকস বাংলাদেশ: সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, শিশুতোষ বাংলা বইয়ের ডিজিটাল সংগ্রহ।
অভিভাবক কন্ট্রোল টুলস:
- Google Family Link (অ্যান্ড্রয়েড/আইওএস উভয়ে)
- Bark (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং): বাংলা কনটেন্ট স্ক্যান করতে পারে।
নিরাপদ অ্যাপের কমন সিগনেচার:
- ☑️ নো থার্ড-পার্টি অ্যাডস
- ☑️ ডেটা কালেকশন ট্রান্সপারেন্সি
- ☑️ অফলাইন এক্সেসের সুবিধা
- ☑️ প্যারেন্টাল ড্যাশবোর্ড
ডিজিটাল প্যারেন্টিং হলো আজকের যুগে সাঁতার কাটার মতো—ভয় পেলে শেখা যায় না, ঝাঁপ দিতেই হবে জ্ঞানের জলে। আপনার শিশু যখন মোবাইলে হাত দেয়, তখন শুধু একটি ডিভাইস তার হাতে থাকে না, থাকে সমগ্র ডিজিটাল বিশ্বের চাবি। শিশুদের জন্য নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ বাছাইয়ের এই গাইড শুধু টেকনিক্যাল জ্ঞান দেয় না, দেয় আত্মবিশ্বাস। আজই বসুন, আপনার ফোনের ফ্যামিলি লিংক সেটিংস চেক করুন, শিশুর ডিভাইসে অপ্রয়োজনীয় পারমিশন বন্ধ করুন, একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ ডাউনলোড করে দিন। মনে রাখবেন, প্রযুক্তি যখন জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়, তখন আপনার সচেতনতাই হবে সেই দরজার তালা—যে তালা শুধু ভালোর চাবিতেই খোলে। একটি ক্লিক আজ, আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করুন।
জেনে রাখুন
প্রশ্ন: কোন বয়স থেকে শিশুকে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত?
উত্তর: আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের মতে, ১৮ মাসের নিচে শিশুকে স্ক্রিন এক্সপোজার না দেওয়াই ভালো। ২-৫ বছর বয়সে দিনে সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা, এবং তা অবশ্যই উচ্চ-গুণমানের শিক্ষামূলক অ্যাপ যেমন Khan Academy Kids বা PBS Kids Games-এর মধ্যে সীমিত রাখুন। বাংলাদেশি শিশুদের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ইন্টারফেস আছে এমন অ্যাপ (যেমন: বাংলা শিশু শিক্ষা) বেছে নিন যাতে তারা সহজে কনটেন্ট বুঝতে পারে।
প্রশ্ন: কিভাবে বুঝবো একটি অ্যাপ শিশুদের জন্য নিরাপদ কিনা?
উত্তর: তিনটি স্টেপে পরীক্ষা করুন: প্রথমে অ্যাপের ডিটেইলস পেজে ESRB বা IARC রেটিং দেখুন (EC-Early Childhood থাকলে ভালো)। দ্বিতীয়ত, Privacy Policy-তে খুঁজুন COPPA বা GDPR কমপ্লায়েন্সের উল্লেখ। তৃতীয়ত, পারমিশন চেক করুন—অপ্রয়োজনীয় এক্সেস (যেমন: ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লোকেশন) থাকলে সতর্ক হোন। বাংলাদেশি অ্যাপগুলোতে প্রাইভেসি পলিসি ইংরেজিতে থাকলে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করুন।
প্রশ্ন: ইউটিউব কিডস অ্যাপ কি শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত?
উত্তর: ইউটিউব কিডসে অটো-প্লে এবং ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্টের কারণে ঝুঁকি থেকেই যায়। ২০২৩ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, কার্টুন চরিত্রের ভিডিওর মাঝে লুকিয়ে থাকা অপ্রত্যাশিত কনটেন্ট শিশুরা দেখে ফেলতে পারে। নিরাপদ উপায় হলো: স্ট্রিক্ট “অ্যাপ্রুভড কনটেন্ট” মোড চালু করা, সার্চ ফিচার বন্ধ করা এবং হিস্ট্রি চেক করা। বাংলাদেশি কনটেন্টের জন্য Bd Kids Tube অ্যাপটি ভালো বিকল্প।
প্রশ্ন: শিশু গোপনে ইন-অ্যাপ ক্রয় করলে করণীয় কী?
উত্তর: প্রথমে, অ্যাপল বা গুগল প্লে স্টোরের পেমেন্ট হিস্ট্রি চেক করুন। গুগলের ক্ষেত্রে play.google.com/report, অ্যাপলের ক্ষেত্রে reportaproblem.apple.com-এ গিয়ে রিকুয়েস্ট সাবমিট করুন। বাংলাদেশে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে ট্রানজেকশন হলে, দ্রুত গ্রাহক সেবায় ফোন করুন। ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করতে: পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন চালু করুন, বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন সেট করুন এবং শিশুর অ্যাকাউন্টে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড না যুক্ত করে প্রিপেইড ওয়ালেট ব্যবহার করুন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শিশুদের ডিজিটাল সুরক্ষার জন্য কোনো হেল্পলাইন আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, শিশু অধিকার ফোরাম বাংলাদেশ চালু করেছে জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯৮, যেখানে শিশুরা বা অভিভাবকরা ডিজিটাল হয়রানি, সাইবার বুলিং বা অ্যাপ-সম্পর্কিত সমস্যার রিপোর্ট করতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের হটলাইন ০১৭৬৯৬৯১৬০। ঢাকার বাইরে জেলা সাইবার সেলগুলোতেও যোগাযোগ করা যায়।
প্রশ্ন: বিনামূল্যের অ্যাপে বিজ্ঞাপন থেকে শিশুকে রক্ষা করার উপায় কী?
উত্তর: তিনটি সমাধান কার্যকর: প্রথমত, অ্যাড ব্লকার এক্সটেনশন (যেমন: AdGuard) ব্যবহার করুন। দ্বিতীয়ত, অ্যাপের সেটিংসে গিয়ে “লিমিট অ্যাড ট্র্যাকিং” অপশন চালু করুন। তৃতীয়ত, বিজ্ঞাপনমুক্ত অ্যাপ বেছে নিন—PBS Kids Games, Khan Academy Kids বা Toca Boca সিরিজের অ্যাপগুলোতে কোনো বিজ্ঞাপন নেই। বাংলাদেশি অ্যাপের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ভার্সন কেনা ভালো, যেখানে বিজ্ঞাপন মুক্ত থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।