জুমবাংলা ডেস্ক : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে স্বজনরা। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা করেছেন তার বাবা। মামলার অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের পুলিশ সুপার।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর বাবার ৪টি বিয়ে। বর্তমানে চতুর্থ স্ত্রী তার পরিবারে রয়েছে। ওই ছাত্রীর মা ঢাকায় থাকলেও সে (শিশুটি) তার সৎ মায়ের কাছে থাকতো। সৎ মা তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্রচারণা চালাতে পারে বলে সন্দেহ এলাকাবাসীর।
গত বুধবার দুপুরে খাজুরিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে নুসরাত জাহান নোহা (৯) নামে ওই শিক্ষার্থীকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় পয়সারহাটের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নোহা স্থানীয় দারুল ফালাহ্ প্রি ক্যাডেট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। গত বুধবার তার স্কুলের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে নোহা অকৃতকার্য হওয়ায় ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন তাকে মারধর করে। এতে সে অপমানিত বোধ করে বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী আগৈলঝাড়ার সাংবাদিক আজাদ রহমান জানান, ফল প্রকাশিত হওয়ার পর শিশুটিকে তার স্কুলের শিক্ষক বেত্রাঘাত করে। স্থানীয়রা তাদের জানিয়েছে, শিশুটি স্কুল থেকে বাসায় ফিরে ওড়না ও রশি নিয়ে টিনসেড বাসার দোতালায় উঠে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা আটকানো দেখে সৎ মাসহ পরিবারের সদস্যরা ডাকডাকি করে। পরে স্থানীয়রা দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক নোহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুটিকে হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্রচারণা চালানোর সন্দেহ করছেন স্থানীয়রা। এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর সৎ মায়ের দিকে। আজাদ রহমান আরও জানান, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার মা গত বুধবার ঢাকা থেকে আগৈলঝাড়ায় এসেছিলেন। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে তিনি তার সতীন ও সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে আগৈলঝাড়া থানায় গিয়েছিলেন। থানায় গিয়ে জানতে পারেন মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে তার স্কুলের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার সাবেক স্বামী। এ খবর জানার পর সে থানা থেকে বের হয়ে ঢাকায় ফিরে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী আজাদ রহমান।
গতকাল দুপুরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নোহার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে তার মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি করোনাকালে সরকারিভাবে স্কুল বন্ধ থাকার পরও ওই স্কুলে কিভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো তা খতিয়ে দেখার কথা বলেন পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম।
এদিকে এলাকাবাসীর সন্দেহের বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন বলেন, শিশুটির বাবার দায়ের করা মামলার আসামি শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমনকে গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এলাকাবাসীর সন্দেহের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তারা তদন্ত করছেন। ময়না তদন্ত রিপোর্টে তাকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন ওসি মো. আফজাল হোসেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।