শীতের প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ তা বেশি টের পাচ্ছেন। অনেক দেশে শীতের সময় বরফ পড়ে। বাংলাদেশে এত শীত পড়ে, কিন্তু বরফ পড়ে না। প্রশ্ন হলো, কেন? সেই সঙ্গে কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, আসলে কি বাংলাদেশে তুষারপাত বা বরফ পড়া সম্ভব?
তুষারপাত কেন হয় না, তা জানার আগে জানতে হবে তুষারপাত কী? বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই জানেন, সূর্যের তাপে সাগর, নদী, খাল-বিল বা পুকুরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে যায়। পানি বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে ওঠার একটা কারণ আছে। সাধারণত যে বস্তু তুলনামূলক হালকা, তা ওপরের দিকে উঠতে চায়। জলীয় বাষ্প বাতাসের চেয়ে হালকা। তাই ওপরে উঠে যায়। যত ওপরের দিকে যাবেন, তাপমাত্রাও তত কমবে।
অবশ্য ওপরে ওঠারও একটা সীমা আছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ কিলোমিটার ওপরে যাওয়ার পর বাতাসে জলীয় বাষ্পের ধারণক্ষমতা কমে যায়। এই অঞ্চলকে বলে ক্ষুব্ধমণ্ডল বা ট্রপোমণ্ডল। ইংরেজিতে ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)। এটা বায়ুমণ্ডলের একটা স্তর। এ অঞ্চলের বায়ুতে প্রচুর ধূলিকণা। জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ধূলিকণা মিশে তা ভারী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমলে পরিণত হয় তুষারে। বাতাসের তুলনায় এ তুষার আরও ভারী হয়ে যায়। বাতাস আর সেগুলো ধরে রাখতে পারে না। তখন তুষারকণা ঝরে পড়ে ভূপৃষ্ঠে।
এ পর্যন্ত পড়ার পরে মনে হতে পারে, তুষারকণা যদি আকাশ থেকেই ঝরে পড়ে, তাহলে বাংলাদেশে পড়তে দোষ কী? বাংলাদেশেও একটু পড়লে তো মন্দ হতো না। কিন্তু এ জিনিস বাংলাদেশে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণটা বলছি।
আকাশে তুষারকণা তৈরি হলে তা তো আর বাংলাদেশ বা সাইবেরিয়া চেনে না। সব দেশেই সমানভাবে পড়ে। কিন্তু কোন অঞ্চলে তুষারপাত হবে আর কোন অঞ্চলে হবে না, তা নির্ভর করে তাপমাত্রার ওপর। মূলত তুষারপাত হওয়ার জন্য যেকোনো দেশের তাপমাত্রা নামতে হবে হিমাঙ্কের নিচে। অর্থাৎ শূন্য ডিগ্রির নিচে থাকতে হবে তাপমাত্রা। বাংলাদেশের তাপমাত্রা কষ্মিনকালেও হিমাঙ্কের নিচে নামেনি। দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০১৮ সালে তেঁতুলিয়ায়, ২.৬ ডিগ্রি। যেহেতু দেশের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নামে না, তাই তুষারপাত বা বরফও পড়ে না।
কিন্তু তাপমাত্রার সঙ্গে বরফ পড়ার সম্পর্ক কী? আগেই বলেছি, ভূপৃষ্ঠের সব জায়গায় সমানভাবে তুষারকণা পড়ে। এরপর যে দেশে তাপমাত্রা কম (যেমন সাইবেরিয়া), সে দেশে তুষারকণা বরফ আকারেই থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা যেহেতু ২০ ডিগ্রির ওপরে, তাই তুষারকণা গলে পানিতে পরিণত হয়। ফলে তুষারপাতের পরিবর্তে বাংলাদেশে হয় বৃষ্টি। মূলত তুষারকণা ও বৃষ্টিকণা একই। কোনোটা বরফ আকারে পড়ে, আর কোনোটা পড়ে পানি হিসেবে। বাংলাদেশে তুষারপাত না হলেও শিলাবৃষ্টি হয় মাঝেমধ্যেই।
তবে কি বাংলাদেশে কোনোদিন তুষারপাত হয়েছিল? স্বাধীন বাংলাদেশের রেকর্ড অনুসারে, এ দেশে কোনো দিন তুষারপাত হয়নি। হওয়া সম্ভবও নয়। কারণ, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ওই ২.৬ ডিগ্রি। বারবার এভাবে বলছি, কারণ পৃথিবীতে প্রায় ২৬ লাখ বছর আগে ছিল বরফযুগ। তখন সম্পূর্ণ পৃথিবীই নিমজ্জিত ছিল বরফে। সে সময়, বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ ছিল না।
ফলে বাংলাদেশ নাম হওয়ার পর কোনোদিন বাংলাদেশে বরফ পড়েনি। আর রইল ভবিষ্যতের কথা। সে ক্ষেত্রে শর্ত ওই একটাই। দেশের তাপমাত্রা নামতে হবে শূন্য ডিগ্রির নিচে। বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ুর যে অবস্থা, তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে দেশের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নামবে না। গবেষকদের মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ পঞ্চগড়ের দিকে তুষারপাত হলেও হতে পারে। তবে তা সাইবেরিয়ার মতো ভারী তুষারপাত হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।