শীতকাল মানেই যেমন পিঠা-পুলি আর লেপের আরাম, তেমনই এর এক অপ্রিয় সঙ্গী হলো গা-হাত-পা চুলকানো। শুষ্ক ত্বকের এই সমস্যা অনেকের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। কেন এমনটা হয় এবং এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ই কী, তা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

শীতে এই সমস্যা বাড়ে কেন
আবহাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে শীতকালে ত্বকে চুলকানিসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
সেগুলো হচ্ছে—
শুষ্ক বাতাস ও আর্দ্রতার অভাব
প্রধান কারণ : শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এই শুষ্ক বাতাস ত্বক থেকে দ্রুত জলীয় অংশ শুষে নেয়।
ফলাফল : ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের বাইরের সুরক্ষার স্তর দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে ত্বক ফাটা বা চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার
ক্ষতিকর অভ্যাস : শীতকালে আরামের জন্য আমরা প্রায়শই অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল করি। গরম পানি সাময়িকভাবে আরাম দিলেও তা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে দেয়।
সমস্যা : এই প্রাকৃতিক তেল ত্বককে আর্দ্র রাখে। এটি চলে গেলে ত্বক আরো বেশি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়, যা চুলকানির অন্যতম কারণ।
গরম পোশাকের ঘষা
উল বা সিনথেটিক : উলের বা কিছু সিনথেটিক পোশাকের তন্তু খুব রুক্ষ হয়, যা সংবেদনশীল ত্বকে ঘষা বা ইরিটেশন সৃষ্টি করে। এর ফলেও চুলকানি হতে পারে।
বেশি গরম : অতিরিক্ত গরম পোশাক পরার ফলে শরীরের যে ঘাম হয়, তা থেকেও অ্যালার্জি বা চুলকানি বেড়ে যেতে পারে।
অন্যান্য চর্মরোগের বৃদ্ধি
শীতের শুষ্কতায় একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগগুলো বেড়ে যায়। এ ছাড়া শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সহজে বেঁচে থাকতে পারে এমন খোসপাঁচড়ার মতো ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপও বেশি দেখা যায়।
চুলকানি থেকে মুক্তির সহজ উপায়
এই অস্বস্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাইফস্টাইলে আনতে হবে কিছু ছোট পরিবর্তন—
আর্দ্রতা বজায় রাখুন : গোসলের পর ত্বক সামান্য ভেজা থাকতেই ঘন, তেল-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, অয়েনমেন্ট বা লোশন ব্যবহার করুন। গ্লিসারিন, শিয়া বাটার বা পেট্রোলিয়ামযুক্ত ক্রিম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বক যখনই শুষ্ক মনে হবে, তখনই ময়েশ্চারাইজার লাগান।
গোসলের অভ্যাসে পরিবর্তন : অতিরিক্ত গরম পানির পরিবর্তে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। গোসলের সময় ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে সীমিত রাখুন। মৃদু, সুপার-ফ্যাটেড ও সুগন্ধি-মুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
পোশাক ও পরিবেশ : সরাসরি উলের পোশাক না পরে তার নিচে সুতির নরম পোশাক পরুন। অতিরিক্ত গরম এড়াতে স্তরে স্তরে পোশাক পরুন। শীতকালেও প্রচুর পরিমাণে তরল বা পানি পান করে শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখুন। বাইরে বের হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, কারণ শীতের রোদও ত্বককে শুষ্ক করে দেয়।
জরুরি উপশম : চুলকানি খুব বেশি হলে আক্রান্ত স্থানে ৫-১০ মিনিটের জন্য একটি ঠাণ্ডা, ভেজা তোয়ালে বা বরফের প্যাক প্রয়োগ করতে পারেন।
শীতকালে গা-হাত-পা চুলকানো খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হলেও এর কারণগুলো জেনে সঠিক যত্ন নিলে সহজেই এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত এবং সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, গরম পানি এড়িয়ে চলা এবং ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাই হলো শীতকালীন চুলকানি মোকাবেলার প্রধান অস্ত্র।
যদি ঘরোয়া উপায়েও আপনার সমস্যার সমাধান না হয়, চুলকানি বাড়তে থাকে বা রাতে ঘুম ভেঙে যায়, তবে দেরি না করে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সূত্র : টিভি৯ বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



