আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার বলেছেন, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমাতে চায়, তাদের ‘মোটা টাকা’ গুনতে হবে। বিশ্বের আর্থিক বাজারকে টালমাটাল করে দেওয়া এই শুল্ককে তিনি ‘ঔষধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
সোমবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোতে বড়সড় পতন হয়েছে। মার্কিন শেয়ারবাজারের সূচকও নিম্নমুখী। বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত—ট্রাম্পের শুল্কের কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে, চাহিদা কমবে, বাজারে আস্থা টলবে এবং শুরু হতে পারে বিশ্বমন্দা।
জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকের পতন হয়েছে ৬.৩ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে ৯.৮ শতাংশ। এছাড়া হংকংয়ে তালিকাভুক্ত যুক্তরাজ্যের ব্যাংক এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের শেয়ারও ব্যাপকভাবে পড়ে গেছে।
সোমবার সকালের লেনদেনে হংকংয়ে তালিকাভুক্ত এইচএসবিসির শেয়ারদর ১৫ শতাংশের বেশি কমেছে, অন্যদিকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের শেয়ারদর কমেছে ১৮ শতাংশ।
গত শুক্রবারের সরকারি ছুটির কারণে বন্ধ থাকার পর বাজার খুলতেই মেইনল্যান্ড চীন ও হংকংয়ের শেয়ারবাজারগুলোতে ব্যাপক দরপতন দেখা গেছে। সাংহাই কম্পোজিট সূচক প্রায় ৪.৮ শতাংশ পড়ে গেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ৮ শতাংশের বেশি পতনের মাধ্যমে লেনদেন শুরু করেছে।
সোমবার লেনদেনে জাপানের তিনটি বৃহৎ ব্যাংক মিৎসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ, মিজুহো ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ ও সুমিতোমো মিৎসুই ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের শেয়ারের দাম ১২ শতাংশের বেশি কমেছে।
এছাড়া সোমবার বাজার খুলতেই জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদরও ব্যাপক কমেছে। হোন্ডার শেয়ার প্রায় ৮ শতাংশ কম দামে লেনদেন হয়েছে, নিসানের শেয়ারদর কমেছে ১০ শতাংশ। উভয় প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে। তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠান মিৎসুবিশি মোটরসের শেয়ারদরও প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।
এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক লেনদেন শুরু পরপরই ৪.৮ শতাংশের বেশি পতনের মুখে পড়েছে। তাইওয়ানের তাইএক্স সূচক বাজার খোলার পর ৯.৭ শতাংশের বেশি কমেছে।
এদিকে এয়ার ফোর্স ওয়ান-এ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজার থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।
‘আমি চাই না কোনো কিছুরই পতন হোক। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু ঠিক করার জন্য ঔষধ খেতে হয়,’ বলেন তিনি।
ট্রাম্প জানান, ইউরোপ ও এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। আসন্ন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্কের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বোঝাতে চাইছেন তারা।
‘তারা আলোচনার টেবিলে আসছেন। কিন্তু যতক্ষণ তারা প্রতি বছর আমাদের অনেক টাকা দেয়, ততক্ষণ কোনো আলোচনা হবে না,’ বলেন ট্রাম্প।
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের শুল্কারোপের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এ ঘোষণার জেরে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, সেইসঙ্গে গোটা দুনিয়ায় বাণিজ্যযুদ্ধ ও মন্দার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিনিয়োগকারী ও রাজনীতিবিদরা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না, ট্রাম্পের এই শুল্ক স্থায়ী নাকি অন্য দেশগুলো থেকে সুবিধা আদায়ের দরকষাকষির চাল।
রোববার সকালের টকশোগুলোতে ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা এই শুল্ককে কৌশলী নতুন অবস্থান হিসেবে উপস্থাপন করেছেন—যাতে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শক্তিশালী হয়।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বললেন, গত বুধবারের ঘোষণার পর থেকেই ৫০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এনবিসি-র ‘মিট দ্য প্রেস’-এ তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প নিজেকে সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন।’
কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক সিবিএস নিউজের ‘ফেস দ্য নেশন’-এ বলেন, এই শুল্ক ‘কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ’ বলবত থাকবে।
হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট বলেছেন, এই শুল্ক আরোপের পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভকে চাপ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
জেপিমরগ্যান-এর অর্থনীতিবিদদের প্রাক্কলন অনুসারে, এই শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক জিডিপি ০.৩ শতাংশ কমবে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল ১.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির। বেকারত্বের হারও বেড়ে দাঁড়াবে ৫.৩ শতাংশে, যা বর্তমানে ৪.২ শতাংশ।
ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া ধনকুবের ফান্ড ম্যানেজার বিল অ্যাকম্যান এখন বলছেন, ট্রাম্প ব্যবসায়ী সমাজের আস্থা হারাচ্ছেন।
শনিবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস কর্মকর্তারা বহু দেশের পণ্য থেকে ট্রাম্পের ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে বুধবার থেকে নির্দিষ্ট কিছু দেশের পণ্যের ওপর ১১ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা-শুল্ক কার্যকর হবে।
তবে শুল্ক এড়ানোর আশায় কিছু দেশ ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
রোববার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-থে যুক্তরাষ্ট্রকে শূন্য শুল্কের ভিত্তিতে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাইওয়ানের ব্যবসা-বাণিজ্যে থাকা বাধা দূর করা হবে এবং মার্কিন বাজারে তাইওয়ানিজ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে একটি নির্ধারিত বৈঠকে ইসরায়েলি পণ্যের ওপর নির্ধারিত ১৭ শতাংশ শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।
ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, দেশটি যুক্তরাষ্ট্র-ঘোষিত ২৬ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা এখন একটি সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি রোববার জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর নির্ধারিত ২০ শতাংশ শুল্কের কারণে যেসব ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সরকার তাদের সুরক্ষা দেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।