আব্দুল মান্নান,জুমবাংলা: “মরুর দেশে, বাংলার বাঘ’ এ শ্লোগানে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটি ও দৈনিক সমকাল এর যৌথ আয়োজনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসব-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকালে জীববিজ্ঞান উৎসব কেন্দ্র করে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপস্থিতে জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসব-২০২৩ এর চূড়ান্ত পর্বের উদ্বোধন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য প্রফেসর ড. অলোক কুমার পাল।
এ বারের জীববিজ্ঞান উৎসবে সারা বাংলাদেশে আঞ্চলিক ৮টি ভেনুতে অংশগ্রহনকারী ১৩০০০ প্রতিযোগী থেকে বাছাইকৃত ১২০০ প্রতিযোগী আজকের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী এসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনটি ক্যাটাগরিতে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি, সেকেন্ডারিতে নবম-দশম শ্রেণি ও হায়ার সেকেন্ডারিতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
চূড়ান্ত পর্বের পর বিকালে ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.কে. এম জাকির হোসেনের সভাপতিত্ব প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর ড. অলক কুমার পাল, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রাখহরি সরকার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এর মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ল্যাব বাংলা এর চেয়ারম্যান রাখাল রাহা প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে আগত জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা এই বিজ্ঞান উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেছেন, আমাদের বিজ্ঞান মনষ্ক জীবন ধারণ করতে হবে, নিজের জন্য নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। বাংলাদেশ কেবল এক জায়গায় থেমে থাকবে না। উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে বিজ্ঞান ও গবেষণায় সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দে কোনো কার্পণ্য করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজনীয় অধুনিক যন্ত্রপাতি এবং পর্যাপ্ত ফান্ড দিচ্ছেন। আধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বমানের গবেষণা ও প্রযুক্তির সমপ্রসারণ ঘটছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই বিশ্বময় বিচরণ করা যাচ্ছে। আধুনিক জ্ঞান, প্রতিভা সর্বময় কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। শিশুদের জন্য আমরা আমাদেরকে উৎসর্গ করছি। আমাদের অসমাপ্ত কাজ পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যেতে হবে। সর্বক্ষেত্রে আদর্শ মানুষ হয়ে আমাদের অপূর্ণতাকে তারাই পূর্ণ করবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, আজকের প্রজন্মরাই হবে আগামী দিনের বিজ্ঞানী। মনে রেখো গবেষণা ছাড়া একটি দেশকে বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আজকের এই নতুন প্রজন্মের সদস্যরাই জ্ঞান ও বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকে বিশ্বে বায়োটেকনোলজি এবং ন্যানোটেকনোলজি এই দুইটিতে যে যত বেশি উন্নত সেই দেশকে তত বেশি উন্নত হিসেবে ধরা হয়। তাই গবেষণার বিকল্প নেই। সর্বোপরি যারা দূরদূরান্ত থেকে এই জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে এসেছো তোমাদের সকলকে জানাই আমার শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।
গেস্ট অব অনার হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মশিউর রহমান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম নিয়ে অনেকে মাঝে মাঝে হতাশ হন। তারা মোবাইল ফেসবুক চালোনা ছাড়া কিছু করে না বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু আজকে এই জীব বিজ্ঞান উৎসবে তোমাদের দেখে অফুরন্ত ভালোবাসায় আমার প্রাণশক্তি ফিরে এসেছে। একজন বিজ্ঞান ভাবনার মানুষ সকল ভাবাবেগ বাদ দিয়ে সত্যের অনুসন্ধান, বস্তুনিষ্ঠতা, প্রকৃত বাস্তবতাকে তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা চালায়, তার মধ্য দিয়ে মানুষ যৌক্তিক হয়, সুশৃঙ্খল হয়, আধুনিক হয়। মানুষ নিজের সমাজকে বদলে দেয়ার নতুন নতুন পথ খুঁজে পায়। আর সেটা আমি তোমাদের মাঝে দেখতে পাচ্ছি। তাই আমি তোমাদের বলবো, বিজ্ঞানকে শেখা, বোঝো এবং স্বদেশ সৃষ্টির ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে এগিয়ে চলো। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে একদিন তোমরাই পারবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে। তোমাদের জন্য আমার শুভ কামনা রইলো।
সভাপতির বক্তব্যে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. কে. এম জাকির হোসেন বলেন, জাতীয় জীবনের প্রতিটি অংশে বিজ্ঞানের রূপান্তরকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা বিজ্ঞানে অনেক এগিয়েছি, কোনো অংশেই আমরা পিছিয়ে নেই। নতুন প্রজন্মের হাত ধরে আমরা বিজ্ঞানে আরও এগিয়ে যাবো। আজকের এই অলিম্পিয়াডে বায়োক্যাম্পে অংশগ্রহণ করার জন্য যারা। নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে ৪ জন আগামী জুলাইয়ে দুবাইতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক বায়োলজি অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। বিগত বছরে অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে আমরা ব্রোঞ্জপদক সহ বিভিন্ন পদক অর্জন করেছি। আশাকরি এ বছরেও তোমরা স্বর্ণ, রৌপ্য পদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদক অর্জনের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। বিজয়ী সকলকে অভিনন্দন। সেই সাথে আজকের অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে আমার ও কমিটির পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।