জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার তীব্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন। তার নির্দেশে ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানির মুখে পড়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। যাদের কেউ কেউ এতদিন এলাকায় টিকে ছিলেন, তারাও এখন আত্মগোপনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার এসব সিদ্ধান্ত খাদের কিনারে থাকা আওয়ামী লীগ এখন একেবারে খাদের মধ্যে পড়ে গেছে। দলের অনেক নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পলাতক নেতাদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন তারা।
এসব কারণে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার প্রতি এখন চরম ক্ষুব্ধ। যারা মনে করেছিলেন, সত্যিই শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসতে পারবেন। আওয়ামী লীগ এভাবে ঝটিকা মিছিলের মধ্য দিয়ে দ্রুত রাজনীতিতে ফিরতে পারবে, তাদের সে আশা পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। তাই শেখ হাসিনা এবং পরিবারের সদস্যদের সুবিধার জন্য কেউ আর রাজপথে নামবে না। এছাড়া বিদেশে পলাতক থেকে দলের যেসব গডফাদার উসকানি দিচ্ছেন তাদেরও তারা ফাইন্যালি লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, শেখ হাসিনা বা তার দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচির আহ্বান আসছে, তা ভালো কী মন্দ, ঠিক না ভুল; সেটা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তারা তাদের মতো রাজনীতি করবে এবং তারা সেটা করতে পারে। আমি সাধারণ নাগরিক হিসাবে মনে করি আওয়ামী লীগের যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা নিজেরাও জানে তারা প্রচুর অপরাধ করেছে। এর বিচার হলে তাদের সাজা ভোগ করতে হবে এটাও তারা জানে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়া এই লোকের সংখ্যা খুব বেশি হলে ১০ হাজার। কিন্তু সারা দেশে তাদের নেতাকর্মী তো আরও অনেক বেশি। বাকিরা দেশেই আছে। কেউ জেলে আছে। কেউ পালিয়ে আছে। কেউ আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। যারা পালিয়েছে তারা মূলত দুর্নীতিগ্রস্ত, অপরাধী। তারা আবার রাজনীতিতে নিজেদের পুনর্বাসিত করার জন্য অনেক কিছুই করবে। তারা কর্মসূচি দেবে, কর্মসূচির পেছনে টাকা ঢালবে। প্রয়োজনে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করবে। প্রতিটা বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানের পর পরাজিত শক্তিরা এগুলো করে। এটা নতুন নয়। এটা তাদের রাজনীতি। কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এই ধরনের করাপট লিডারশিপের পেছনে থাকবে, নাকি নিজেরাই বিকল্প লিডারশিপ গড়ে তুলবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ও মাঠে নামা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেন, আমি ঠিক জানি না এখানে আওয়ামী লীগের লোকজন কতটা ছিল। কারণ তাদের দলের জেলা ও থানা পর্যায়ের পদে থাকা বেশিরভাগই দেশে নেই। ফলে আমার ধারণা, এরা দল করা লোক নয়, টাকা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। এটা তারা করতে চাইছে এজন্য যে, কোনো রাজনৈতিক দল তাদের থামাবে বা সরকার তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেবে। এরপর আওয়ামী লীগ গ্লোবালি পেজেন্ট করবে যে তারা তো নিষিদ্ধ দল না। ফলে নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সাংবিধানিক অধিকার তাদের রয়েছে-এটা দেখানোর জন্যই নেতারা বাইরে নিরাপদে বসে থেকে এগুলো করাচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির হিসাবে এটা তো ঠিকই আছে।
এর মধ্য দিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের বিপদের মধ্যে ফেলা হচ্ছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো বটেই। যে কয়জন পালাতে পারেনি, তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। যারা খুব বেশি ক্রাইম করেনি তাদের সঙ্গে এক ধরনের রিকন্সিলেশন হয়েছিল। এটার কারণে দেখা যাবে তারাও পালটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। শেখ হাসিনা তো নেতাকর্মীদের ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতাকেও তো আমরা ভারতের মিডিয়ায় বলতে শুনেছি- ‘আরেকটু আগে বললেও তো আমরা পালাতে পারতাম।’ ফলে শেখ হাসিনা তার বেনিফিটের জন্য এটা করছেন। কারণ তিনি ও তার পরিবার তো নিরাপদ আছে। এখন আমি আশা করি তার দলের নেতারা এটা বুঝবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, শেখ হাসিনার বক্তব্যে আবেগপ্রবণ হয়ে সাধারণ অনেক নেতাকর্মী মাঠে নেমেছেন। তারা মিছিল করে ছবি ও ভিডিও হাইকমান্ডে পাঠাচ্ছেন, যা দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশও করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় রাত ও ভোরে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। তবে সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হওয়ার পর মিছিল তো দূরের কথা, এখন অনেকেই আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।