
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গুম-সংক্রান্ত এবং আরেকটি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দায়ের করা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর দুটি তার শাসনামলে সংঘটিত গুম-সংক্রান্ত অভিযোগ, যেসব মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ইতোমধ্যেই ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে।
অন্য মামলা টি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দায়ের করা। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ মামলায় দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে আরেক মামলায় শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—এমন একটি অডিও বক্তব্য অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগে ওই মামলা দায়ের করা হয়।
গুম সংক্রান্ত দুই মামলা
গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সরকারের সময় সংঘটিত আলোচিত গুমের দুই ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দুটি ফরমাল চার্জ গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সেদিন জানান, গুম, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে—সাবেক সরকার আমলে র্যাবের কিছু বিপথগামী সদস্য টিএফআই সেল ও বিভিন্ন গোপন বন্দিশালায় রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ব্লগারসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক রেখে নির্যাতন করত। অন্য মামলায় ডিজিএফআইয়ের কিছু সদস্য জেআইসি সেন্টার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের আটক রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ দুটি মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ র্যাব ও ডিজিএফআইয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা।
১৭ নভেম্বর মামলার কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী শুনানি ২৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড মামলা
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে সংগঠনের নেতা আজিজুল হক ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব ও মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষে তিনি এ অভিযোগ করেন। এতে ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক এমপি হাজি সেলিম, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
গত ১২ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ১২ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরদিন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা এখন বিচারাধীন। একটি জেআইসি সেন্টারের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ, আরেকটি র্যাবের টিএফআই সেলে নির্যাতনের মামলা, এবং তৃতীয়টি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যা–সংক্রান্ত মামলা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



