জুমবাংলা ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ সোমবার সকালে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন। শেখ হাসিনার সম্মানে বিমানবন্দরে একটি লাল গালিচা বিছানো হবে। এ সময় সেখানে ৬-৭ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল স্বাগত নৃত্য পরিবেশন করবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনেতিক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই সফরের মধ্যে দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন মোড় নিতে পারে। পেশাদার কূটনীতিকদের মতে, দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের বোঝাপড়া, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি, যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে জ্বালানি সহ নিত্যপণ্যের সরবরাহে সৃষ্ট সংকট এবং বাংলাদেশ ও ভারতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সফরটিতে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। কার্যত বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক জোরদার করাই প্রাধান্য পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং উপ-রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করবেন। করোনাভাইরাস মহামারী প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে তার সর্বশেষ সফরের পর ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর তার আসন্ন ভারত সফরের সময় বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে ৬ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং একান্ত বৈঠক করার কথা রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করা হবে।
হায়দ্রাবাদ হাউসে পৌঁছলে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন। শেখ হাসিনা পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তার সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।
৫ সেপ্টেম্বর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে তার। ৬ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখারের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একই দিনে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করবেন এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী ৭ সেপ্টেম্বর তার সাথে পৃথক সাক্ষাত করবেন। আদানি গ্রুপ চেয়ারম্যান গৌতম আদানিও ৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
৭ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের “মুজিব বৃত্তি” প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ, আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) এবং ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফরের প্রথম দিনে দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগাহ পরিদর্শন করবেন।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এবারের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা সমঝোতা স্মারক ও নবায়ন তালিকার মধ্যে রয়েছে-দুই দেশের স্টাফ কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা ও কুশিয়ারা নদীর জল উত্তোলন। এ ছাড়া নবায়নের মধ্যে রয়েছে ব্লু-ইকোনমি নিয়ে সমঝোতা স্মারক। এ ছাড়া রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের দুটি সমঝোতা স্মারক হতে পারে। নেপালের জিএমআর কোম্পানির সঙ্গে ভারতের ওপর দিয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হতে পারে। এবারের সফরে রূপসা নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ হস্তান্তরসহ আরও প্রকল্প উদ্বোধন হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-১। সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) করার জন্য আলোচনা শুরুর বিষয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে। এই চুক্তি হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে একটি শক্ত কাঠামো দাঁড়াবে, যার অধীনে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। গম, পেঁয়াজসহ ভারত থেকে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এসব পণ্য সরবরাহের বিষয়েও উভয় দেশের মধ্যে অঙ্গীকার হতে পারে। ভারতের ব্যবহার না হওয়া বিদ্যুৎ রপ্তানির অঙ্গীকার আসতে পারে। পাশাপাশি গম ও পেঁয়াজের মতো পণ্যগুলোর চাহিদা ভারতকে অগ্রিম জানালে তারা রপ্তানির ব্যবস্থা করতে পারবে এমন সমঝোতাও হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে প্রতিরক্ষা খাতে নতুন কোনও চুক্তি সই হবে না বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার লক্ষ্যে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই হয়েছিল। ওই চুক্তির আওতায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ওই ঋণ বাস্তবায়নের দিক নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ভারতের ঋণের বাস্তবায়নে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে। এখন পর্যন্ত ৮০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে ভারত।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র থেকে জানা গেছে, কানেকটিভিটির দিকটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে দিল্লি। দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগের যোগাযোগ ব্যবস্থা ফের চালু করতে চায় দিল্লি। রেলওয়ের ক্ষেত্রে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মংলা রেল সংযোগ এবং দুই দেশের মধ্যে নতুন ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস চালুতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ভবিষ্যৎ প্রকল্পের কথা আসতে পারে যৌথ ঘোষণায়।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গুরুত্ব পাবে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক সহযোগিতা। কারণ বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নানান ঘটনা প্রবাহে এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সংকট তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো বিভেদ তৈরি করছে বিরোধের বাইরে থাকা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও। এ ছাড়া বিশ্বের নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক যেন প্রভাবিত না হয় বা নতুন কোনও মোড় না নেয় সে বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ থাকবে ভারতে। বাংলাদেশও চাইবে বিশ্ব যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে বা পড়তে যাচ্ছে সেখান থেকে উত্তরণে বিশেষ সহযোগিতা। এসব কারণে এ সফরে ভারত বাংলাদেশের সহযোগিতার পাশাপাশি প্রাধান্য পেতে যাচ্ছে উপ-আঞ্চলিক যে কোনও পরিস্থিতিতে দুই দেশের অবস্থান, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বিরোধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি। স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ হতে পারে।
প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের ভারত সফর করতে যাচ্ছেন। যদিও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের কোনও কমতি নেই, তার পরও বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে এ ধরনের সফর আর আয়োজিত নাও হতে পারে। এ কারণেই এই সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দুই দেশের পক্ষ থেকেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।