বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ জালিয়াতির মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও একাধিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরকে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং অন্তত ১০ জনের বিরুদ্ধে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, “মামলার তদন্তকালে জানা গেছে, এজাহারনামীয় আসামি শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থান করছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার অবস্থান শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করার জন্য বিজ্ঞ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।” এছাড়া চিঠিতে আদালতের আদেশ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, এজাহারের কপি, অভিযোগপত্রের কপি ও পূরণকৃত রেড নোটিশ ফরম সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, অন্যান্য প্রাপ্ত চিঠিতেও একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। রেড নোটিশ জারি করতে প্রথমে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব যাবে, এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইন্টারপোল সদর দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন পাঠানো হবে।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার অভিযোগপত্র দুদক দাখিল করেছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ছয়টি প্লট জালিয়াতির মামলায় তারা আসামি, যেখানে অভিযোগ অনুযায়ী, অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতার প্রভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন। এই মামলায় মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে, যেখানে অভিযোগ অনুযায়ী তিনি একাই ৯ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া তার স্ত্রী জীশান মীরজা ৩১ কোটি টাকার বেশি সম্পদ অর্জন করেছেন। আদালত ইতিমধ্যেই তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, ফ্ল্যাট, শেয়ার ও জমি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব বিদেশেও রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে আদালত তাদের বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে।
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১০৪ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি এবং বড় অঙ্কের মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা নিজেদের কোম্পানির হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করেছেন এবং ইসলামী ব্যাংকসহ আরও আটটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নাম-বেনামে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
দুদকের এই উদ্যোগের মাধ্যমে এসব মামলায় অন্তর্ভুক্ত উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হলো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।