জুমবাংলা ডেস্ক : বিজ্ঞাপনের বাজারের ৮০ শতাংশ যেনো এশিয়াটিক গ্রুপের কাছে থাকে সেজন্য সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর এমন কোন কাজ নেই যা করেননি। এশিয়াটি গ্রুপ হচ্ছে আলী যাকের পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় দৈনিক আমার দেশে ২৩ জানুযারি প্রকাশিত সৈয়দ মিজানুর রহমানের করা একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এশিয়াটিক গ্রুপের বিজ্ঞাপন বাজার দখলের বিষয়টি উঠে এসেছে।
আলী যাকের মারা যাওয়ার পর আসাদুজ্জামান নূর এসে এশিয়াটিক গ্রুপের দায়িত্ব নেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এশিয়াটি গ্রুপ থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে এশিয়াটি গ্রুপের সব শেয়ার ছেড়ে দেন আসাদুজ্জামান নূর।
বর্তমানে এশিয়াটিক গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকের।
আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে যেমন খুনের অভিযোগ রয়েছে তেমনি এশিয়াটিক গ্রুপের মাধ্যমে মিডিয়া শাসন করার অভিযোগও রয়েছে। কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিল আটকে দিয়ে গণমাধ্যমকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখত এশিয়াটিক গ্রুপ।
কম মূল্যে বিজ্ঞাপন পাবলিশ করতে গণমাধ্যমকে বাধ্য করা হতো হাসিনার আমলে। এর ফলে বিজ্ঞাপন সংখ্যা বাড়লেও আয় কমেছে সকল মিডিয়ার। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক মিডিয়া। তিনি টিভি চ্যানেল বা পত্রিকা বয়কট করার মাধ্যমে তাদের চাপে রাখতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এশিয়াটিক গ্রুপের ওসব বড় ধরনের চাপ তাদের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব হতো না।
শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি দেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আওয়ামী ‘গবেষণা’ প্রতিষ্ঠান সিআরআই। অভিযোগ আছে, প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি তত্ত্বাবধানে গবেষণার নামে মূলত বিরোধী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের দমনের ছক কষা হতো এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গনও নিয়ন্ত্রণ করত। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে চালাত মিথ্যা প্রচারণা। তথাকথিত এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে এশিয়াটিক গ্রুপের এমডি ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ইরেশ যাকের বিগত দেড় দশকে দেশের মিডিয়া অঙ্গনে নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছেন বিজ্ঞাপনী বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। সরকারি খাতের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, র্যাব, পুলিশ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, আইসিটি মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন, ইভেন্ট ও মিডিয়া সংক্রান্ত কাজগুলোর সবই দখলে রাখেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। এ উপলক্ষে গোটা বাংলাদেশকেই সাজিয়েছিল হাসিনা সরকার। এ সময় কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজনে। সেই ইভেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হাসিনার বিশ্বস্ত এশিয়াটিক গ্রুপকে দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের ইভেন্ট ছিল মোদি আর কোবিন্দকে কেন্দ্র করে। আওয়ামী লীগের রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমন্বয় করে সেসব কাজ করেন ইরেশ যাকের।
ইরেশ যাকেরের প্রভাবে এশিয়াটিককে দেওয়া একটি দরপত্রের কাগজ এসেছে আমার দেশ-এর হাতে। এতে দেখা যায়, মুজিব শতবর্ষ উদযাপনে শুধু গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিওডি) ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকেই ৯৮ কোটি ৫১ হাজার ৬৭ টাকা নিয়েছে এশিয়াটিক গ্রুপ। এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন এ পরিমাণ টাকা নিয়েছে সংসদ ভবনের সামনে একটি মঞ্চ তৈরি, নায়ক-নায়িকাদের জন্য ছোট আকারের একটি গ্রিন রুম, অতিথিদের বসার ব্যবস্থা এবং একটি ছোট অস্থায়ী তাঁবু দিয়ে অফিস রুম স্থাপনের জন্য। সেই সঙ্গে তিন দিনের অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ, জেনারেটর ভাড়া ও সিসি টিভি ভাড়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল এর মধ্যে।
এ বিষয়ে এশিয়াটিক গ্রুপ দৈনিক আমার দেশের কাছে দাবি করেছে, ইরেশ যাকের কখনোই আওয়ামী রিসার্চ উইং সিআরআইর উপদেষ্টা সদস্য বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। সিআরআই’র প্রতিষ্ঠাতা রেহানাপুত্র ববি বা সিআরআইর অন্য কারো সঙ্গে ইরেশ যাকেরের ব্যক্তিগত কিংবা এশিয়াটিক থ্রি-সিক্সটি গ্রুপের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক কোনো দিনই ছিল না। তারা আরো দাবি করে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানের ওয়ার্ক অর্ডারপ্রাপ্তির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি এশিয়াটিক থ্রি-সিক্সটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে সম্পন্ন করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।