সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার বা রাজাকারের বাচ্চা’ বলেননি, বরং বিষয়টি ভুলভাবে বোঝা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল) আমির হোসেন।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তিনি।
আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, “মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তারা কোনো ষড়যন্ত্র করেননি এবং তাদের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দেওয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন। শেখ হাসিনা কখনো এমন মন্তব্য করেননি; শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ভুলভাবে বুঝেছে।”
রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী কখনো শিক্ষার্থীদের দাবির বিরোধিতা করেননি। প্রসিকিউশন বলেছে, শেখ হাসিনার প্ররোচনায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে, কিন্তু কোনো সাক্ষীর জবানবন্দিতে এমন কিছু পাওয়া যায়নি।”
ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ড্রোন ব্যবহার অপরাধ নয়। এটি গুলি চালানোর নির্দেশ নয়; বরং যেখানে ভিড় বেশি ছিল, সেই স্থান চিহ্নিত করে মানুষকে সরানোর কাজ করা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি হলে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হতো—কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কিছু স্থানে গুলির ভিডিও দেখা গেলেও তার নির্দেশ শেখ হাসিনা দেননি।
প্রসিকিউশনের দাখিল করা কল রেকর্ড সম্পর্কে আইনজীবী বলেন, শোনানো অডিওগুলোর বৈধতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু একটি সরকারি সংস্থার ফরেনসিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এগুলোকে সঠিক বলা হচ্ছে। প্রতিটি অডিও রেকর্ডের প্রতিবেদন ভিন্ন একটি স্বতন্ত্র সংস্থা থেকে ক্রসম্যাচিং করা প্রয়োজন ছিল। এ মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক ১৬ অক্টোবর শেষ হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলার দুই আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি, তাদের অবৈধ সম্পত্তি ক্রোক করে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদনও করেন তিনি। একই সঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয়ে আদালতের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।
গত ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশনের পক্ষে সর্বশেষ ও ৫৪তম সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়। আসামিরা পলাতক থাকায় আইন অনুযায়ী তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ নেই।
ফলে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়েই এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এর পরের ধাপই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কের পরেই মামলাটি রায়ের দিকে এগিয়ে যাবে।
গত ১২ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচদিন প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। এরপর ২০ অক্টোবর থেকে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন জন আসামি। তারা হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তবে মামুন পরে রাজসাক্ষী হিসেবে হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার সাক্ষ্য মামলায় অভিযোগ প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে প্রসিকিউশন সূত্র।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।