জুমবাংলা ডেস্ক : আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমান শেয়ারবাজারে পরিচিত ছিলেন বাজে কোম্পানির ‘প্লেসমেন্ট-শিকারি’ হিসেবে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর মানহীন যত কোম্পানি শেয়ারবাজারে এসেছে, তার বেশির ভাগের প্লেসমেন্ট সুবিধাভোগী ছিলেন তিনি। নিজের ও পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের নামে এসব প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনতেন সাবেক এ এনবিআর কর্মকর্তা।
শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ও ঢাকাভিত্তিক দুটি ব্রোকারেজ হাউসে নিজের, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর নামে খোলা পাঁচটি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স(বিও) হিসাব থেকে মুনাফা তুলে নিয়েছেন প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। এর বাইরেও মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে ১৫টির বেশি বিও হিসাবের সন্ধান পাওয়া গেছে। পাঁচটি বিও হিসাব থেকে মুনাফার তথ্য পাওয়া গেলেও বাকিগুলোর মুনাফার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি বিও হিসাবে ৩৬ কোটি টাকা মুনাফার মধ্যে মতিউর রহমান নিজে মুনাফা করেছেন প্রায় ৪ কোটি টাকা, মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা ২৩ কোটি টাকা, ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ওই কোম্পানির মালিকেরা চাইলে তাদের পছন্দের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন শেয়ার ইস্যু করতে পারেন। কাগজ–কলমে এসব শেয়ার বিক্রি করা হয় ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে। পরে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির একটি নির্দিষ্ট সময় পর এই প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করে দেন। এভাবে মোটা অঙ্কের মুনাফা করে সংঘবদ্ধ একটি প্লেসমেন্ট চক্র। এ প্লেসমেন্ট চক্রেরই আলোচিত একটি নাম মতিউর রহমান, যিনি এনবিআরের শীর্ষস্থানীয় পদে ছিলেন।
নিজের ও পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের নামে এসব প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনতেন মতিউর রহমান।। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের সময়কালে বাজারে আসা বেশির ভাগ কোম্পানির প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মতিউর রহমান ও তার কাছ থেকে সুবিধা পাওয়া লোকেরা।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের আগে দেশের কোম্পানিগুলোর মূলধন বৃদ্ধিতে বিএসইসির অনুমোদন বাধ্যতামূলক ছিল। মূলধন বৃদ্ধির এ অনুমোদন নিয়েই প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করত কোম্পানিগুলো। ফলে ২০১০ সালের আগে শেয়ারবাজারে ‘প্লেসমেন্ট শেয়ারের’ রমরমা বাণিজ্য গড়ে ওঠে। সেই সময় এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। মতিউর রহমানও এ বাণিজ্যের সুবিধাভোগী একজন।
জানা যায়, তিনি তার সরকারি পদপদবি ব্যবহার করে কোম্পানিগুলোকে নানা ধরনের সুবিধা দিতেন, বিনিময়ে পেতেন প্লেসমেন্ট শেয়ার। কাগজ–কলমে এসব শেয়ারের জন্য অর্থ বিনিয়োগ দেখানো হলেও বাস্তবে প্রভাবশালী সরকারি পদস্থ ব্যক্তিরা এসব শেয়ার পেতেন বিনামূল্যে। শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনেকে এটিকে ‘ঘুষ’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
যদিও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যে কিছুটা লাগাম টানা হয়। আইন করে কমিয়ে আনা হয় প্লেসমেন্ট সুবিধাভোগীর সংখ্যা। তারপরও প্লেসমেন্ট শেয়ার–বাণিজ্য নিয়ে নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে বিএসইসি কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধিতে অনুমোদন নেয়ার বিধানটিই বাতিল করে দেয়।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানিতে মতিউর রহমান, তার পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের নামে প্লেসমেন্ট শেয়ারের সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, এসকে ট্রিমস, মামুন অ্যাগ্রো, লুব-রেফ বাংলাদেশ, ডমিনেজ স্টিল, এক্মি পেস্টিসাইড, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, অ্যাগ্রো অর্গানিকা, ফরচুন শুজ, রিং সাইন টেক্সটাইল, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, কাট্টলি টেক্সটাইল। এসব কোম্পানিতে মতিউর রহমানের নিজের নামে ৬০ লাখের বেশি শেয়ার ছিল। পরে বাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের কয়েক গুণ মূল্যবৃদ্ধির পর তিনি তার হাতে থাকা প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন।
এ ছাড়া অনিক ট্রিমস নামের অ-তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানিতেও মতিউর রহমান, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও ভাইয়ের নামে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শেয়ার রয়েছে। এ কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানা যায়।
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা মতিউরকে নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।