স্পোর্টস ডেস্ক: লন্ডন প্রতিদ্বন্দ্বী টটেনহ্যাম হটস্পারকে কাল নিজের মাঠে দাঁড়াতেই দেয়নি চেলসি। হটস্পার স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে ব্লুজরা। উভয় ক্লাবই তাদের সাবেক কিংকদন্তী স্ট্রাইকার জিমি গ্রিভসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ম্যাচটি শুরু করে।
এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে দারুন এক জয় নিশ্চিত করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। জেসি লিঙ্গার্ডের শেষ মুহূর্তের গোলে ওয়েস্ট হ্যামকে ২-১ ব্যবধাওনে পরাজিত করেছে ওলে গানার সুলশারের শিষ্যরা। এর আগে ৩০ মিনিটে সাইদ বেনরাহমারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল হ্যামার্সরা। ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ৩৫ মিনিটে তা পরিশোধ করে ইউনাইটেডকে সমতায় ফেরান। ৮৯ মিনিটে সফরকারীদের তিন পয়েন্ট উপহার দেন বদলী হিসেবে খেলতে নামা লিঙ্গাার্ড। কিন্তু তার আগে ম্যাচের নাটকীয়তা কিছুটা হলেও বাকি ছিল। অতিরিক্ত সময়ে লুক শ’র হ্যান্ডবলে ওয়েস্ট হ্যাম পেনাল্টি আদায় করে নেয়। স্পট কিক নেবার জন্য জ্যারর্ড বোয়েনের স্থানে হ্যামার্স কোচ ডেভিড ময়েস মাঠে নামান মার্ক নোবেলকে। কিন্তু নোবেলের শট বামদিকে ঝাপিয়ে পড়ে রুখে দেন ডেভিড ডি গিয়া। এই জয়ে চেলসি ও লিভারপুলের সাথে সমান ১৩ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ ম্যাচ শেষে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে ইউনাইটেড।
পর্তুগীজ সুপারস্টার রোনাল্ডোকে দারুনভাবে সহযোগিতা করেছেন পল পগবা, ব্রুনো ফার্নান্দেস ও ম্যাসন গ্রীনউড। তবে মূল একাদশে কাল সুযোগ পাননি জেডন সানচো। জুলাইয়ে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বড় অর্থের বিনিময়ে ইউনাইটেডে এলেও এখন পর্যন্ত নিজেকে ফিরে পাননি সানচো। এটি ছিল রোনাল্ডোর তিন ম্যাচে চতুর্থ গোল। সুলশার এখনো তার আক্রমনভাগের সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেননি।
হটস্পারের বিপক্ষে প্রথমার্ধে গোলশুন্য থাকার পর বিরতির পরপরই চেলসিকে এগিয়ে দেন থিয়াগো সিলভা। ৫৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন এন’গোলো কন্তে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর এটি চেলসির হয়ে কন্তের প্রথম গোল। স্টপেজ টাইমে এন্টোনিও রুডিগারের গোলে বড় জয় উপহার পায় ব্লুজরা। থমাস টাচেলের অপরাজিত দলটি পাঁচ ম্যাচে চতুর্থ জয় নিশ্চিত করলো।
এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাত্র এক গোল হজম করেছে চেলসি। অথচ এ পর্যন্ত মৌসুমের শুরুতে সবচেয়ে বেশী কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নদের। ইতোমধ্যেই চেলসি লিভারপুল, টটেনহ্যাম ও আর্সেনালের মত বড় দলগুলোর সাথে খেলে ফেলেছে। আগামী সপ্তাহে স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে আরো একটি বড় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে চেলসি।
স্পার্স তারকা গ্রিভস কাল ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। টটেনহ্যামের হয়ে ১৯৬১-৭০ সাল পর্যন্ত গ্রিভস ৩৭৯ ম্যাচে ২৬৬ গোল করেছেন। পুরো পেশাদারী জীবনে দারুন ছন্দে থাকা এ তারকা চেলসির হয়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৫৭ ম্যাচে ৪৪ গোল করা গ্রিভস ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন। ম্যাচ শুরুর পূর্বে তার স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তখন উভয় দলের সাথে টাচলাইনে দাঁড়িয়ে ৬২ হাজার সমর্থকের পাশাপাশী গ্রিভসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পুরোনো ক্লাব সতীর্থ মার্টিন শিভার্স।
টটেনহ্যামের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় গ্রিভসের পরে ২৩৩ গোল করে দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্ট্রাইকার হ্যারি কেন বলেছেন, ‘জিমি একজন অসাধারন খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি ক্লাব ও দেশের একজন কিংবদন্তী খেলোয়াড়। তিনি যে কতটা ভাল খেলোয়াড় ছিলেন তা মনে করলেই শিহরিত হয়ে উঠি।’
গ্রিভসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুরো দলকে ভাল একটি ম্যাচ উপহার দেবার আহবান জানিয়েছিলেন কেন। কিন্তু এবারের মৌসুমে এখনো পর্যন্ত গোলবিহীন থাকা ইংলিশ অধিনায়ক কালও ছিলেন ব্যর্থ। প্রথমার্ধে আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনের শট বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। মার্কো আলোনসোর ক্রস থেকে কেই হাভার্টজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। জেনিতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয়ের পর কোমরের ইনজুরিতে পড়া গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডি কাল খেলতে পারেননি। তার পরিবর্তে কেপা আরিজাবালাগা মৌসুমের প্রথম ম্যাচে চেলসির মূল একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। বেশ কিছু আক্রমন চালিয়ে কেপাকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে টটেনহ্যাম। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা সন হেয়াং-মিনের একটি প্রচেষ্টা লাইনের উপর থেকে কোনমতে রক্ষা করেন কেপা।
বিরতির পর ম্যাচে ফিরে আসার তাগিদে টাচেল ম্যাসন মাউন্টের পরিবর্তে মাঠে নামান ফরাসি মিডফিল্ডার কন্তেকে। আর এতেই বদলে যায় পুরো দলের চেহারা। আলোনসোর ক্রস থেকে দারুন এক হেডে ৪৯ মিনিটে সিলভা হুগো লোরিসকে পরাস্ত করলে এগিয়ে গিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে ব্লুজরা। ৫৭ মিনিটে কান্তের ২৫ গজ দুরের শট আটকাতে পারেননি লোরিস। টিমো ওয়ার্নারের ক্রস থেকে ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে রুডিগার তৃতীয় গোল করলে টটেনহ্যামের টানা দ্বিতীয় পরাজয় নিশ্চিত হয়। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।