নিজস্ব প্রতিকেদক, গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ীতে চুরির অপবাদে কারখানার এক শ্রমিককে অফিস কক্ষে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ভয়াবহ সেই নির্যাতনের ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক জনমত ও প্রতিবাদ। ঘটনার জেরে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার (২৭ জুন) দিবাগত রাতে কোনাবাড়ীর গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকের নাম মো. হৃদয় (১৯)। তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে এবং ওই কারখানায় মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়—অফিস কক্ষে হৃদয়কে জানালার গ্রিলের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে একাধিক ব্যক্তি তাকে পিটাচ্ছেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। মারধরের পর তার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়লেও কয়েকজন তাকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন এবং এ সময় কেউ কেউ হাসাহাসিও করছেন। এক পর্যায়ে কেউ বলছেন, “অনেক মারছে, কিছুই হইলো না, এখনও মরেনি।”
নিহতের বড় ভাই লিটন মিয়া শনিবার (২৮ জুন) দিবাগত রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রোববার রাতে ওই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কারখানার এক শ্রমিক হাসান মাহমুদ ওরফে মিঠুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন জানান, “হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।”
এদিকে, হৃদয়ের খোঁজ না পেয়ে তার মা ও ভাই কারখানায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পরে কর্তৃপক্ষ জানায়, হৃদয়ের মরদেহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ শনাক্ত করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পর কারখানাটি দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) কারখানা খোলার সম্ভাবনা রয়েছে।”
নিহত হৃদয়ের পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন চালিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরদেহ দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তারা হৃদয় হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, শ্রমিকের উপর এমন নির্মমতা যে কোনো মানবিক বিবেচনায় ন্যক্কারজনক এবং শিল্প এলাকায় শ্রমিক সুরক্ষার প্রশ্ন নতুন করে তুলেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।