আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ চাকরি প্রতিবেদন একদিকে যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি প্রশান্তিকর। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে গত জুলাইয়ে ৯ লাখ ৪৩ হাজার নতুন চাকরি যোগ হয়েছে। চাকরি বাজারে বছরখানেকের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভালো অবস্থা হলেও সেটি সংকটপূর্ব অবস্থানে পৌঁছাতে ২০২২ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ধনী বিশ্বের বাকি অংশ আগের অবস্থায় ফিরতে আরও কিছুদিন সময় নিতে পারে। এসব জায়গায় করোনাভাইরাস আঘাত হানার আগে শ্রমিকের যে চাহিদা ছিল, সেই পরিস্থিতি আজও ফেরেনি। সবচেয়ে বড় কথা, এ সময়ে বহু মানুষ কর্মজীবন থেকে অব্যাহতি নিয়েছে।
করোনা শুরুর আগে ধনী বিশ্বে অভূতপূর্ব গতিতে চাকরির ক্ষেত্র বাড়ছিল। ২০১৯ সালে শ্রমশক্তিতে (কর্মরত বা সন্ধানরত) ১৫ বছর বয়সোর্ধ্বদের অংশ ছিল ১৯৯০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। অধিকাংশ ধনী দেশেই কর্মক্ষম বয়সে কর্মসংস্থানের হার (চাকরিতে ১৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের অংশ) ছিল সর্বকালের সর্বোচ্চ।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এখন ঠিক তার উল্টোপথে হাঁটছে শ্রমবাজার। আটটি দেশের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দ্য ইকোনমিস্টের হিসাব বলছে, ধনী বিশ্বে বর্তমান কর্মসংস্থানের হার মহামারি-পূর্ব সর্বোচ্চ সূচকের চেয়ে অন্তত ৩ শতাংশ নিচে অবস্থান করছে। অর্থাৎ, সেটি প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ লোকের ঘাটতি নির্দেশ করছে।
ঘাটতির কারণ কী?
এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, শ্রম চাহিদা কমে যাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও এখনকার শ্রমচাহিদা মহামারি-পূর্ব সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ কম। প্রস্তুতকারক ও স্বাস্থ্যখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও অবকাশ ও সেবা খাতের চাহিদা করোনা-পূর্ব সময়ের তুলনায় অন্তত ১২ শতাংশ কম লক্ষণীয়।
এক্ষেত্রে করোনা সম্পর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞারও বড় ভূমিকা রয়েছে। প্যারিসের মতো শহরগুলোতে অসংখ্য হোটেল আজও বন্ধ। আবার অনেক অর্থনীতিবিদ অপর্যাপ্ত ব্যয় সক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করছেন। চলতি বছর তিন-চতুর্থাংশ ধনী দেশে ‘আর্থিক প্রণোদনা’ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক শ্রমিক ঘাটতির কারণ শুধু চাহিদা কমে যাওয়াই নয়, শ্রমিক সরবরাহও অনেকাংশে দায়ী। এর কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আশানুরূপ গতি হারাচ্ছে। করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর ধনী বিশ্বে লোকবলে ব্যাপক ধস নেমেছে।
দ্য ইকোনমিস্টের ধারণা, এর হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অন্য সূচকগুলোও শ্রমিকের অভাব নির্দেশ করছে; উদাহরণস্বরূপ- মজুরি মোটামুটি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শ্রমিক ঘাটতি কাটবে কবে?
এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে শ্রমিক সরবরাহ কেন কমলো, তা জানতে হবে। এর পেছনে রয়েছে মূলত তিনটি কারণ: করোনাভাইরাসের বিস্তারজনিত বাধা, কল্যাণ নীতি ও পেনশনের প্রভাব এবং মহামারিসৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি মনোভাব পরিবর্তন।
সব কিছু মেলালে দেখা যায়, মহামারিসৃষ্ট আতঙ্ক কতদিন দীর্ঘস্থায়ী হয় তার ওপরই নির্ভর করছে শ্রমিক ঘাটতির স্থায়িত্ব। মজুরি বৃদ্ধি হয়তো শ্রমশক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া কিছু মানুষকে ফের কাজে যোগ দিতে উৎসাহিত করবে। কিন্তু মহামারি যত বেশি স্থায়ী হবে চাকরিচ্যুতদের কাজে ফেরা ততই কঠিন হয়ে উঠবে। সেদিক থেকে এটি স্পষ্ট যে, শ্রমিক ঘাটতি আপাতত আরও কিছুদিন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে বাধা হয়েই থাকছে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।