শ্রীপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অটো স্পিনিং মিলে অগ্নিকান্ডের ঘটনার আগে থেকেই নানা অসঙ্গতি ও অসম্পূর্ণতার আলামত বিরাজমান ছিল। তাদের ফায়ার লাইন্সেরও মেয়াদ ছিল না।

মঙ্গলবার গাজীপুরের শ্রীপুরে অটো স্পিনিং মিলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের পর বুধবার ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান জানান, শ্রীপুরের অগ্নিকান্ডের ঘটনার তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে বুধবার চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। এতে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দীলিপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। ১৫দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ওই কারখানার ফায়ার লাইসেন্সের মেয়া শেষ হয় ৩০জুন। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন দেয়ার পর কারখানাটি পরিদর্শনও করা হয়েছে। কিন্ত পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগেই ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে বুধবার তদন্তে নেমেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুর ইসলাম জানান, শ্রীপুরে অটো স্পিনিং মিলে অগ্নিকান্ডের প্রাথমিক কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। আর বড় গুদামের উপরে তাপ শোষনের জন্য লাগানো ফোমজাতীয় দাহ্য ফলসসিলিং এবং নিচে তুলা থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে গেছে। এছাড়া অগ্নিনির্বাপনে কারখানায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও প্রয়োজনীয় পানি মওজুদ রাখার মত রিজার্ভ ট্যাংকি ছিল না। এত বড় কারখানা ও গুদামের জন্য রিজার্ভ ট্যাংকির আয়তন কম ছিল। এছাড়া আশেপাশে জলাধার/জলাশয় না থাকায় দমকল কর্মীরাও পানি সংকটে পড়েন। তাই আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেড়েছে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে সাত কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকার সহকারি পরিচালকের দপ্তরের পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ২২ মে তিনি ওই কারখানাটি পরিদর্শন করে গেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি দেখতে পান কারখানায় স্বয়ংক্রিয় ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশনের কোন কিছুই ছিল না। দূর্ঘটনার সময় বা জরুরী প্রয়োজনে বের হওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিক জরুরী বহির্গমনের পথ (আইলস মার্ক) ছিল না। বিকল্প পথগুলো (এক্সিট)  বাধামুক্ত ছিল না। পানির একটি ওপেন রিজার্ভার থাকলেও তা ছিল ময়লাযুক্ত, শতভাগ ব্যবহার উপযোগী ছিল না। এ ছাড়াও আরো একটি অপর্যাপ্ত ধারণক্ষমতা যুক্ত আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে, যেখানে গিয়ে পানি সরবরাহের পথ ছিল দু:সাধ্য।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, গাজীপুরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী জানান, কলকারখার অন্যান্য সমস্যা তেমন ছিল না। তবে কারখানায় পানির পর্যাপ্ত রিজার্ভার ছিল না।

কারখানার জি এম হারুন-অর-রশিদ জানান, আগুন নির্বাপনের সকল সরঞ্জাম ছিল। কিন্তু আগুনের ব্যাপকতা এত বেশি ছিল যে সেসব সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। একই কারণে পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে অটো স্পিনিং কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট প্রায় ১২ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ছয়জন শ্রমিক মারা যান।